শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শরীরের যত্ন না নিলে, শরীর কি আপনার যত্ন নিবে?

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
শরীরের যত্ন না নিলে, শরীর কি আপনার যত্ন নিবে?

ডা. আলিম আল রাজি :

উচ্চতা অনুযায়ী আমার ওজন হওয়া উচিত ৭৭ বা ৭৮ কেজি।

কোভিডের কোয়ারেন্টাইন, বিবাহ-পরবর্তী দাওয়াত - সব মিলিয়ে ওজন বেড়ে হঠাৎ করে ৯০ কেজি হয়ে গেলো।
৯০ কেজি ওজন নিয়ে প্রতিটা দিন কীভাবে যেত আমি জানি।

প্রথম যে সমস্যা তৈরি হলো সেটা হচ্ছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে দিনের বেলা পুরোটা সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকতাম। হাসপাতালে ঘুম-ঘুম, সভা সেমিনার মিটিং-এ ঘুম-ঘুম, বাসায় ঘুম-ঘুম! মনে হতো, সাথে একটা বালিশ নিয়ে ঘুরি আর যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি।
আরেকটা বিরক্তিকর সমস্যা ছিলো - গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স। অর্থাৎ পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালীতে চলে আসা। প্রচন্ড বুক ব্যাথা এবং বুক জ্বালাপোড়া নিয়ে কতবার যে ইসিজি করেছি! ব্যাথায় প্রতিবারই মনে হতো - এটা নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক, একটু পরেই আমি মরে যাবো।
পড়ালেখা বলতে গেলে গত দেড়টা বছর করিইনি। ঘুমাইয়া কুল পাইনা, পড়ালেখা করবো কখন?
যাও একটু আধটু পড়তাম - কিছুই মনে থাকতো না। প্রায়ই মনে হতো - আমার কি অ্যালজাইমার্স হয়ে যাচ্ছে!
অল্প হাঁটলে হাপিয়ে যাওয়া, সিড়ি ভাংলে প্রচন্ড বুক ধড়ফড় - ইত্যাদি তো রয়েছেই!
বুঝতে পারছিলাম - সামথিং ইজ ভেরি ভেরি রঙ। এই 'সামথিং'টা যে অবেসিটি সেটাও বুঝতে পারলাম। সমস্যার সমাধান একটাই - ওজন কমানো।
৭ মাসে ১২ কেজি ওজন কমলো।
না, আমি না খেয়ে, কিটো করে ওজন কমাইনি। সুষম খাবার খেয়েছি, প্রচুর হেঁটেছি এবং প্রতিদিন গড়ে ৮/১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছি।
আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি - নিজেকে ফিট রাখার এই যে জার্নি এটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

ওজন কমানোর পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন - কী ছিলেন এবং কী আছেন। এবং একবার ওজন কমে গেলে আপনি জীবনেও আর আগের অবস্থায় ফেরত যেতে চাইবেন না।

১২ কেজি কমার পর আমার সব সমস্যা একদম জাদুর মতো সমাধান হয়ে গেছে। আমি আর কখনোই ওজন বাড়াতে চাইনা।
ট্রাস্ট মি - বিং ফিট ইজ অ্যান অ্যাডিকশন। আপনার প্রতিদিন হাঁটতে ইচ্ছা হবে, এক্সারসাইজ করতে ইচ্ছা হবে এবং অন্যকে উৎসাহ দিতে ইচ্ছে করবে।
ক্যানসার নয়, করোনা নয়, কিডনি রোগ নয়, লিভারের রোগ নয়, সবচেয়ে ভয়ংকর রোগ হচ্ছে এই অবেসিটি।
হ্যাঁ, অবেসিটি নিজেই একটা ডিজিজ। অন্য ডিজিজের সাথে এটার পার্থক্য হচ্ছে এটা আপনাকে হুট করে মারবেনা। তিলে তিলে মারবে।

এটা আপনার স্ট্রোক করাবে। আপনি বাকিটা জীবন কাটাবেন বিছানায়, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে।
এটা আপনার হার্টের রোগ করবে। জীবনের সব সঞ্চয় আপনার চলে যাবে ৪ দিনের আইসিইউ-যাপনে।

আপনার কিডনি বিকল করবে। সপ্তাহে ২ টা ডায়ালাইসিস লাগবে ৩০০০ টাকা করে। মরবেন, তবে সন্তানকে রেখে যাবেন এক অনিশ্চিত অন্ধকারে।

আপনার ক্যানসার করবে। জীবন যন্ত্রণা না হয় বাদই দিলাম, প্রচন্ড ব্যায়বহুল এ চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে আপনার আপনজন আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে।
তাই কেবল অবেসিটি কমিয়েই অনেকগুলো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আজ হার্ট দিবস। ভাবলাম, পত্রিকার কলাম এবং টেক্সট বইয়ের থিওরি না কপচে বরং নিজের অভিজ্ঞতাটাই শেয়ার করি, হার্টের রোগ এবং অবেসিটি যেহেতু খুবই কাছাকাছি দুইটা রোগ।
আমিও ভাবতাম, পারবো না। কিন্তু পারা যায়, ট্রাস্ট মি।
ইচ্ছা করলেই আপনি বাসা বদল করতে পারবেন, এক শহর ছেড়ে চলে যেতে পারবেন অন্য শহরে, এক দেশ থেকে উড়াল দিতে পারবেন অন্য দেশে। কিন্ত শরীরটা চ্যাঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। জীবনের একদম শেষ মুহূর্তে স্বজনরাও যখন ছেড়ে চলে যাবে তখন এই শরীরটাই কেবল পাশে থাকবে আপনার।

এই শরীরের যত্ন না নিলে শরীর কি আপনার যত্ন নিবে?


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল