শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শুদ্ধতা ছড়িয়ে দেওয়ার অর্ধযুগে 'শুদ্ধস্বর'

সোমবার, মার্চ ১৫, ২০২১
শুদ্ধতা ছড়িয়ে দেওয়ার অর্ধযুগে 'শুদ্ধস্বর'

সময় জার্নাল প্রতিবেদক : ৭ম বর্ষে পদার্পণ করলো 'শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ সরকারি তিতুমীর কলেজ'প্রজন্মের দীপ্ত উচারণস্লোগানকে ধারণ করে দীর্ঘ বছর তিতুমীরের আকাশে শুদ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। আবৃত্তি, নাচ গানসহ নানা সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তিতুমীর কলেজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সর্বত্র।

 

সদস্যরা স্বীয় প্রতিভা দিয়ে ইতোমধ্যে তিতুমীর কলেজে জনপ্রিয় হয়েছে সংগঠনটি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের পরিবেশনা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে বেশ। শুরুটা হয়েছিল আড্ডায় কবিতা আবৃত্তি দিয়ে। পর যোগ হয়ে নাচ গান।

 

জানা যায়, ২০১৫ সালে মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, আব্দুর রহমান তিতুমীর, মো. ইসহাক আলী তৈমুর মিলে দুই দফা মিটিং করে সংস্কৃতিপ্রেমি শিক্ষক নাছিমা আক্তার চৌধুরীর সাথে। তিনি একমত পোষণ করেন। সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। ঠিক করা হয় নাম, লক্ষ্য উদ্দেশ্য স্লোগান। অল্প কয়েকজন সদস্য মিলে আড্ডায় কবিতা গানের চর্চা চলে। আরো কিছু সদস্য যুক্ত হয় এই পরিবারে। চলে সংস্কৃতি অনুরাগী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ। এভাবে কেটে যায় বছর।

 

২০১৬ সালে আরো নতুন উদ্যমে কাজ চলতে থাকে। এসময় দল বেঁধে আসেন প্রতিভাবান কিছু সদস্য। এবছর শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীর ভালবাসা পায়। বেশ কয়েকটি আলোচনা সভা নিয়মিত আড্ডা চলতে থাকে। ১৬ তে কলেজ প্রশাসনের মৌখিক অনুমোদন মিলে। বিজয় দিবস ২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রথম অংশগ্রহণ করে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সদস্যরা।

 

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত পরিষদ কার্যনির্বাহী পরিষদ। তাই ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে লিখিত আবেদন পত্রে কার্যকরী পরিষদ উল্লেখপূর্বক অনুমোদন নেওয়া হয়। শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের অনলাইন যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ এর আগস্ট মাসের ২০ তারিখ। তবে টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতা না থাকায় এর কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলেনি।

 

১৭ মার্চ ২০১৭ শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের প্রথম বড় প্রযোজনামহানায়কের আগমনমঞ্চায়িত হয়। এটির গ্রন্থনা নির্দেশনায় ছিলেন প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী।

 

এরপর সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিজেদের বিভিন্ন প্রযোজনায় মুখরিত করতে থাকে প্রিয় ক্যাম্পাসকে। সরকারি তিতুমীর কলেজে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। যা সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

 

শুধু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নয়, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ নানান মানবিক কাজ করে থাকে। ২০১৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়ার জন্য সাংবাদিক সমিতির ডাকে একযোগ সকল সংগঠন নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করে তার পাশে দাঁড়ায়, তখন একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সংগঠন।

 

কনসার্ট ফর সাদিয়ানামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফান্ড সংগ্রহ করে তুলে দেন তার পরিবারের কাছে। তাছাড়া সম্মিলিত কার্যক্রমে (বক্স করে সাহায্য গ্রহণ) নিয়মিতভাবে অংশ নেয় সংগঠনের সদস্যরা।

  

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায় শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ। এই পথচলায় সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনগুলো সাহায্য করেছে এবং করছেন।

 

সংগঠনটির সফল পথচলা নিয়ে শুদ্ধস্বরের সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিক হোসাইন বলেন, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ বছরে পদার্পণ করলো এটা ভাবতেই একটা অজানা ভালো লাগা কাজ করছে। এখনো মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। শুদ্ধস্বরের সাথে আমার যোগাযোগের শুরুটা আমার ক্লাসমেট বন্ধু নিলুফার ইয়াসমিন জুঁই বর্তমান সভাপতি মোঃ ইসহাক আলি মধ্য দিয়ে। অর্ধযুগ পূর্তি উৎসবের ক্ষণে নিজে শুদ্ধস্বরের একজন সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করছি।

  

তিনি বলেন, আজকের এই গৌরবময় দিনে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে চাই সরকারি তিতুমীর কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আশরাফ হোসেন স্যার, সদ্য সাবেক সম্মানিত উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মোসাঃ আবেদা সুলতানা ম্যাম বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা ম্যাম কে। এর পাশাপাশি বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কামরুন্নাহার মায়া ম্যামের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। এছাড়াও কলেজের বিভিন্ন বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক মহোদয় আমাদের কে ভালোবাসায় যেভাবে আগলে রেখেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

 

তিনি আরো বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ রিপন মিয়া ভাই সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল ভাই শুদ্ধস্বরের যেকোনো অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সাথে যে ভূমিকা পালন করে থাকেন তা বোধহয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়াও আমাদের সকল কার্যক্রম সুনিপুণ ভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে উক্ত সংগঠনের সম্মানিত সভাপতি শিশির ভাই, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির ভাই দপ্তর সম্পাদক ফেরদাউস ভাইয়ের কথা আলাদা করে বলতেই হয়।

 

শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সভাপতি ইসহাক আলি বলেন, ‘প্রজন্মের দীপ্ত উচারণস্লোগানকে সাথী করে আমাদের যাত্রা শুরু। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানবিক মানস গঠণে আমাদের সকল আয়োজন। আমরা বাঙালির ঐতিহ্য লালনের মাধ্যমে তরুণ্যের জয়গাঁথা রচনায় ব্রতী।

 

তিনি আরও বলেন, এই অর্ধযুগের পথচলায় আমাদের প্রপ্তি অনেক গুণী শিল্পী-কর্মী। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভালবাসা। আজ বসন্ত প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রাণের উৎসব, যা আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ইতোমধ্যে দেশবরেণ্য প্রখ্যাত মনীষীদের ভালবাসা পেয়েছে প্রিয় সংগঠন। যা আমাদের খুব আনন্দিত করে। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময় প্রিয় সংগঠনের নাম। সেই সাথে পরম মর্যাদায় উচ্চারিত হবে সরকারি তিতুমীর কলেজের নাম, এই আমাদের চাওয়া।

 

সংগঠনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শুভ জন্মদিন প্রাণের সংগঠন শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ, সরকারি তিতুমীর কলেজ' হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ অর্ধযুগ পূর্তি উৎসব-২০২১ পালন করতে যাচ্ছে আমার ২য় পরিবার। এই শুভ দিনে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সকল সদস্য, অত্র কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী, ভাই- বোন, বন্ধু, প্রিয়জন এবং অন্য অন্য সংগঠনের সকল সদস্যদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ভালোবাসা। শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা। প্রাণের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সকল সদস্য এবং কলেজের সকল সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই শুভ দিনে প্রত্যাশা রইলো সকল সদস্য হোক এক একজন শিল্পীত মানুষ, মানবিক মানুষ। পরিশেষে আবারও সবাইকে জানাই অর্ধযুগ পূর্তি উৎসব-২০২১ এর শুভেচ্ছা ভালোবাসা

 

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, আমি যখন তিতুমীর কলেজে আসলাম তখনই মনে হতো ছাত্রদের যদি এমন একটা সংগঠন থাকতো, ভালো হতো। কলেজে বিভিন্ন দিবসে আমি বিচারক হিসেবে থাকতাম, তখন মিরাজুল ইসলাম মিরাজ আব্দুর রহমান তিতুমীরসহ কিছু শিক্ষার্থীর সাথে পরিচয় ঘটে। ওদের নিজেদের মধ্যেই কবিতা নিয়ে চর্চা করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতো। এরপর ওরা আমার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসলো। তাদের প্রস্তাব আমার কাছে ভালোই লাগলো। তাই তাদের বললাম যেহেতু এটা সরকারি কলেজ, সেহেতু কলেজ প্রশাসনের একটা অনুমতি দরকার। তোমরা আগে একটা অনুমতি নাও। ১৬ সালে মৌখিক অনুমতি পায়।

 

প্রতিষ্ঠার সময়কার নানা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অনুমতি পায়। ধীরে ধীরে সংগঠনে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর প্রিন্সিপাল স্যারে কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে আমরা একটা পরিবেশনার অনুমতি পাই। কিন্তু আমাদের পরিবেশনা ছিলো সবার শেষে। কিন্তু আমাদের পরিবেশনার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায়। স্যার, দ্রুত শেষ করতে বলছিলেন, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের সব আয়োজন থমকে যায়। সবার মন খারাপ, সেজেগুজে বসে আছে। এমনভাবে বিদ্যুৎ গেলো, অনেকে বলতে ছিল আসতে অনেক দেরি হবে। আমাদের মনটা খারাপ, বাচ্চাদের চোখ ছলছল করতাছে। আল্লাহর কি রহমত,,, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে আসে। তখনও অনিশ্চয়তা ছিল। তারপর স্যার অনুমতি দিল।

 

এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, কলেজে সারা বছরই পরীক্ষা লেগে থাকে। পরীক্ষা থাকলে ক্লাস বন্ধ থাকে। এছাড়া বিভিন্ন বন্ধ থাকে। তখন রিহালসেল করতে সমস্যা হয়। মূলত যখন পুরোপুরি ক্লাস চলে তখন রিহালসেল করা যায়। কিন্তু ঘন ঘন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় কিছুটা বাঁধার মুখে পরতে হয়েছে।

  

তিনি আরো বলেন, কোন বাঁধাই বাঁধা না। ওদের ইচ্ছার কাছে সমস্ত বাঁধাই হার মেনেছে। ওরা অনেক কষ্ট করেছে। আমি সাথে ছিলাম। এরপরও নানা কারণে মনে হচ্ছে বেশি সময় দিতে পারিনি। তারপরও মনের মধ্যে কিছুটা তৃপ্তি আছে, একেবারে তৃপ্তি আসলে তো সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। মনে একটা আনন্দ আছে। একটা সংগঠন হাটি হাটি পা পা করে এগেয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটি বছর কেটে গেছে। যার পুরো কৃতিত্ব হচ্ছে আমাদের দলের সদস্য, কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার, ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ তিতুমীরের সকলের। আমি মনে করি শুদ্ধস্বর তিতুমীরে খুব জনপ্রিয়।

 

এসময় তিনি সাংবাদিক সমিতির নানা সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন।

 

 

সময় জার্নাল/ইম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল