রাবি প্রতিনিধি : ‘উপাচার্য হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ নয়, বরং শিক্ষাবিদ হওয়াটায় গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
সোমবার (১৫ মার্চ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মানবতা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনে এ প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এসময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কে হবে? তিনি একজন দলের নেতা হবেন নাকি একজন শিক্ষাবিদ হবেন। তার একটা আদর্শ থাকবে? নাকি সে আদর্শহীন হবে? আমি মনে করি উপাচার্য নিশ্চই আদর্শবান হবেন। কিন্তু রাজনৈতীক দলের কত বড় নেতা সেটা বড় কথা নয়। বরং তিনি কত বড় শিক্ষাবিদ সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
সাংসদ বাদশা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও মানবতা এই তিনটি জিনিস যদি সংকটে থাকে তাহলে বাংলাদেশও সংকটে পড়বে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় এখন সংকটে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হতে পারব না।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৪ দলীয় জোটের এই নেতা আরও বলেন, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ছাত্ররা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মিছিল করে বলছে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য। কেন বলছে? বুঝে বলছে? না বুঝে বলছে। এটা আজ আমাদের বোঝা দরকার। পার্লামেন্টের শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য করেছে আমাকে। আমি বুঝিই না এই কমিটির কোনো মূল্য আছে কিনা এবং তারা কেউ হিসাবও করে না, এই কমিটির লোকেরা শিক্ষা নিয়ে কেউ কিছু বোঝে কিনা। এটা কোনো দিন বিবেচনা করে দেখাও হয় না।’
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মানবতা বইয়ের লেখক অরুণ কুমার বসাক। তিনি যেমন বক্তা তেমনি তার লেখার ধার। তার মতো মানুষ খুব কম দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মানবতা এর ওপর আর কি আলোচনা থাকতে পারে। আমি মনে করি এই বইটা একটা জ্ঞানভা-ারের মতো। যতবার পড়বো ততবার নতুন নতুন করে দেখতে পাবো।
অনুষ্ঠানে রাবি’র সাবেক উপাাচার্য ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান বলেন, অরুণ কুমার বসাকের বইয়ের টাইটেলে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা এবং মানবতা এ তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। মানবতা সব থেকে বড় বিষয়। মানবতা না থাকলে শিক্ষা নেওয়া বা না নেওয়ার মধ্যে কিছু আসে যায় না। আমরা সেই ঐশীর কথা জানি। সে তার বাবা-মাকে খুন করে। তার মানবতা ছিল কি? ছিল না। তাই শিক্ষকদের উচিত প্রতিক্লাসে অন্তত ৫ মিনিট মানবতার শিক্ষা দেওয়া যায়। এতে যদি ৫০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন যদি এই জ্ঞান আহরোণ করে সেটিই স্বার্থকতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর সুব্রত মজুমদার। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, বিশিষ্ট রাজনীতিক আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও পেনিনসুলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ারুল হক বক্তব্য রাখেন।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মানবতা’ শীর্ষক এই গ্রন্থে অধ্যাপক বসাকের শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা ৩৪টি প্রবন্ধ এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। ২৬০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক নিয়োগের ভূমিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বলেন, আমার স্ত্রী বই প্রকাশ করার জন্য তার মৃত্যুর আগে আমার এক ছাত্রে কাছে টাকা দিয়ে ছিলেন। আমি আজকে এ অনুষ্ঠান তাকে উৎসর্গ করছি। এছাড়া প্রকাশক, প্রুফ রিডার থেকে শুরু করে বইপ্রকাশের সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। তিনি প্রায় ৫ দশকের বেশি সময় ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। এছাড়াও তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং বার্মিংহাম, ওহাইও স্টেট, কেন্ট স্টেট ও সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিটিপিতে গবেষণা করেছেন।
সময় জার্নাল/ইম