নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় ও ভারতের বিপক্ষে ড্রয়ে দারুণ শুরু করা বাংলাদেশ মাঠে নামে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার লক্ষ্যে। স্বপ্ন ছিল দেড় যুগ ধরে মালদ্বীপকে হারাতে না পারার ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসারও। কিন্তু পোড় খাওয়া মালদ্বীপ জেগে উঠল দুর্দান্তভাবে। বাংলাদেশ পেল চলতি আসরে প্রথম হারের স্বাদ।
মালদ্বীপের রাজধানী মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপাধারী মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। দুটি গোলই বাংলাদেশ হজম করে দ্বিতীয়ার্ধে।
শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনার পর শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র করা বাংলাদেশ ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নেপাল।
নেপালের কাছে ১-০ গোলে হেরে মুকুট ধরে রাখার মিশন শুরু করা মালদ্বীপের দুই ম্যাচে পয়েন্ট ৩। দুই ড্রয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে সাফের রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। তিন ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে শ্রীলঙ্কা।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতায় সেই ২০০৩ সালে শিরোপা জয়ের পথে মালদ্বীপকে সবশেষ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫ সালে কেরালার আসরে তারা হেরেছিল ৩-১ গোলে।
সবশেষ ২০১৬ সালের প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশের ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল; মালদ্বীপের কাছে হেরেছিল ৫-০ গোলে। এবারও ব্যর্থতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারল না দল।
দুটি পরিবর্তন এনে মালদ্বীপ ম্যাচের একাদশ সাজান বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুসন। কার্ডের খাঁড়ায় ছিটকে যাওয়া বিশ্বনাথ ঘোষ ও রাকিব হোসেনের জায়গায় সুযোগ পান রহমত মিয়া ও সোহেল রানা।
শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য করলেও প্রথমার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণ ভেদ করতে পারেনি মালদ্বীপ। প্রথম ২০ মিনিটে তাই আনিসুর রহমান জিকোর কোনো পরীক্ষাই নিতে পারেননি আলি আশফাক-আলি ফাসিররা।
ঘর সামলে পাল্টা আক্রমণে ওঠা বাংলাদেশই বরং এই ভাগে সুযোগ তৈরি করে বেশি। দ্বিতীয় মিনিটে বিপলু আহমেদের শট সরাসরি যায় গোলরক্ষক মোহাম্মদ ফয়সালের গ্লাভসে। নবম মিনিটে এই মিডফিল্ডারের আরেকটি শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
২১তম মিনিটে জামালের কর্নার ডিফেন্ডাররা ফেরানোর পর মোহাম্মদ ইব্রাহিমের দূরপাল্লার ভলি উড়ে যায় ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে।
২৯তম মিনিট বেঁচে যায় ২০০৩ সালে প্রথম ও সবশেষ সাফের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ। বক্সের মাঝামাঝি বল পেয়েও আশফাক আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বাঁ দিকে থাকা নিহান হোসেনের উদ্দেশে। সাদউদ্দিন পথ আগলে দাঁড়ানোয় ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি নিহান। বল চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা আলি ফাসিরকে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন কাজী তারিক রায়হান। বুদ্ধিদ্বীপ্ত ছোট ফ্রি কিকে আশফাক বল দেন বক্সে ফাঁকায় থাকা ফাসিরকে। এই ফরোয়ার্ডের শট স্লাইড করা রহমত মিয়ার পা ছুঁয়ে কর্নার হয়।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভালো সুযোগ পায় সাফের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ। কিন্তু দলটির তারকা ফরোয়ার্ড আশফাকের বাঁকানো ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ত্রাতা জিকো।
৫২তম মিনিটে আলি ফাসির একটু এগিয়ে বক্সের কাছাকাছি এসে দেখে শুনে দুরের পোস্টে শট নিয়েছিলেন। জিকো ছিলেন নির্ভরতার দেয়াল হয়ে। ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করে ফেরান বসুন্ধরা কিংস গোলরক্ষক।
তিন মিনিট পর প্রতিরোধ ভাঙে বাংলাদেশের রক্ষণের। কর্নার ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি ডিফেন্ডাররা। সতীর্থের হেড পাস বাই সাইকেল কিকে জালে জড়ান হামজা মোহামেদ। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ার মাশুল দিয়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর তিনটি পরিবর্তন আনেন ব্রুসন। বিপলু, রহমত ও ইব্রাহিমকে তুলে নিয়ে সুমন রেজা, জুয়েল রানা, মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামান এই স্প্যানিয়ার্ড। কিন্তু দলের খেলায় ফেরেনি চেনা ধার।
৭০তম মিনিটে মতিনের জোরালো শটে জামাল ভূইয়া ফ্লিক করেছিলেন, কিন্তু বেরিয়ে যায় বাইরে দিয়ে।
৭৪তম মিনিটে পেনাল্টি গোলে ম্যাচের ভাগ্য ঝুঁকে যায় মালদ্বীপের দিকে। বক্সে নাইজ হাসানকে বাংলাদেশের মিডফিল্ডার সোহেল রানা পেছন থেকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। জিকোকে বিপরীত দিকে ছিটকে দিয়ে আয়েশী শটে লক্ষ্যভেদ করেন আশফাক।
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মতিন, কিন্তু দুর্বল এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগটি নষ্ট করেন বসুন্ধরা কিংসের এই ফরোয়ার্ড।
শুরুর দিকের একটু-আধটু চেষ্টা ছাড়া কখনই বাংলাদেশ তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেনি মালদ্বীপকে। প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ফাউল করে ৩০টি! হলুদ কার্ড দেখে ৫টি। বিপরীতে মালদ্বীপ ফাউল করে ৭টি, হলুদ কার্ড পায় একটি।
হারের সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্ভাবনা আরও বাড়ল ফরোয়ার্ডরা গোল না পাওয়ায়। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে দলের গোলদাতা ছিলেন দুই ডিফেন্ডার তপু বর্মন ও ইয়াসিন আরাফাত।
রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির এই আসরে আগামী ১৩ অক্টোবর নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনাল খেলতে হলে আসছে ম্যাচ জিততেই হবে বাংলাদেশকে। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর ফলের দিকেও।
এমআই