স্পোর্টস প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে আগেই একটি পা দিয়ে রেখেছে স্কটল্যান্ড। প্রথম পর্বের ‘বি’ গ্রুপ থেকে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত তাদের। আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশকে হারাতে পারলে স্কটল্যান্ডকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টিকিট কাটবে ওমান। বাংলাদেশের মিশন টুর্নামেন্টে টিকে থাকার। সে লক্ষ্য ওমানকে যেকোনো মূল্যে হারাতে হবে বাংলাদেশকে।
জটিল সমীকরণ মেলাতে একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে টাইগাররা। তবে ঘোর অমানিশা হয়ে নেমে আসা ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে কিছুতেই বের হতে পারছে না টাইগাররা। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহানরা যেন ব্যাটিং করতেই ভুলে গেছেন! ওমানের বোলারদের বিপক্ষে প্রাণপণ লড়ে নাঈম শেখের ৬৪ রানের ইনিংসের কল্যাণে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সংগ্রহ ১৫৩ রান। বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে এই রানের মধ্যে আটকাতে হবে স্বাগতিক ওমানকে।
বাংলাদেশের ১৫৩ রানের পুঁজির জন্য নাঈম শেখদের উচিৎ ওমানের ফিল্ডারদের ‘ধন্যবাদ' দেওয়া। একাধিক ক্যাচ ফেলে প্রতিপক্ষকে এই সংগ্রহ পাইয়ে দিতে সাহায্য করেন কাশাপ প্রজাপতি, যতিন্দর সিংরা। ক্যাচের সঙ্গে গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংও ছিল ছন্নছাড়া। তবে দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। কলিমুল্লাহ, বিলাল খানরা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে হয়ে উঠেন ‘অপ্রতিরোধ্য’। নিখুঁত লাইন-লেংথ আর সুইংয়ে কখনো লাসিথ মালিঙ্গা, কখনো মিচেল স্টার্কের রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন।
টস জিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিতে বোধহয় খুশি হতে পারেননি দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ। তাদের ব্যাটিংয়ের কৌশল দেখে অন্তত সেটিই ধারণা করা গেল। বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রথম ২ ওভারে ৮টি বলই ডট। দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে তুলতে পারলেন ৬ রান। তৃতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৪ রানে জীবন পেলেন লিটন, তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন কাশাপ। কিন্তু সাজঘরে ফেরার বোধহয় তাড়া ছিল লিটনের। পরেই বলেই আউট হলেন ৪ রান করে।
নাঈনকে নিয়েও আলোচনা দীর্ঘদিনের। পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাননি নাঈম, আজ ফিরেছেন সৌম্য সরকারের পরিবর্তে। সুযোগ পেয়ে যেন নিজের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ ও ২৬ রানে। তখনও রানের থেকে বল বেশি খেলে ফেলেছিলেন তিনি। তবে ওমানের ফিল্ডাররা সহজ দুটি ক্যাচ নিতে পারেননি।
ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে শেখ মেহেদীকে ৩ নম্বরে নিয়ে আসে ম্যানেজমেন্ট। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মেহেদী। ফায়াজ বাটকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দেরেন শূন্য হাতে। সাকিব আল হাসান ৪ নম্বরে নেমে অস্বস্তি ভুগেছেন অনেকক্ষণ। তবে সময়ের সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হন সাকিব। ততক্ষণে নাঈমের ব্যাটেও ফেরে স্বস্তি। দলীয় ২১ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে তুলতে পারে ২৯ রান।
এরপর সুযোগ পেয়ে বড় জুটি গড়েন সাকিব আর নাঈম। দুজনেই ছুটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে সাবিক রান আউটের শিকার হন। ফেরেন ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। সাকিব না পারলেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক তুলে নেন নাঈম। তার ফিফটি আসে ৪৩ বলে। যা একেবারেই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়।
সাকিবের বিদায়ের পর নুরুল হাসান সোহান নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে। সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। জেসান মাকসুদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৩ রান করে। তবুও ব্যাট হাতে দেখা যায়নি মুশফিকুর রহিমকে। আফিফ হোসেনের উপর আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। হতাশ করেন তিনিও। ৫ বল খেলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নে আফিফ।
তৃতীয়বার যখন ক্যাচ তুললেন নাঈম, সেবার আর সুযোগ মেলেনি। থেমে যায় তার ৬৪ রানের ইনিংস। ৫০ বলে খেলে ৩টি চার ও ৪টি ছয় মারেন এই বাঁহাতি তরুণ। ১৯ বল দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে রান তোলার গতিতে ভাটা পড়ে বাংলাদেশের। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুশফিকুর রহিম এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি। খোঁচা দিয়ে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন ৬ রান করে। পরের বলেই বিদায় নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
শেষদিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে লড়াই কওয়ায়াকাঁরার মতো পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে টাইগারদের ইনিংস থামে ১৫৩ রানে। জয়ের জন্য ওমানের প্রয়োজন ১৫৪ রান। ওমানের হয়ে ফায়াজ বাট সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন।
এমআই