বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধ

ক্ষতিগ্রস্তদের গুরুত্ব দিচ্ছে না উন্নত দেশগুলো

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৯, ২০২১
ক্ষতিগ্রস্তদের গুরুত্ব দিচ্ছে না উন্নত দেশগুলো

সময় জার্নাল ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জরুরি সহায়তার প্রয়োজনকে ‘গুরুত্ব দিচ্ছে না’। ‘সারশূন্য’ প্রতিশ্রুতি না দিয়ে বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেন। চলতি মাসের শেষে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এর আগে এই নিবন্ধ প্রকাশ হলো।

প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর পদক্ষেপ যখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে এবং সেটা সম্ভবও। কিন্তু দেশগুলো কার্বন নির্গমনের পরিমাণ দ্রুত কমিয়ে আনছে না।’

২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে চুক্তিবদ্ধ হন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিও হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হতে পারে, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয় সেই চুক্তিতে। সেই লক্ষ্যে কোন দেশ কতটা কী করল, তা পাঁচ বছর পরপর জানানোর কথাও ওই চুক্তিতে ছিল। কোভিড মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে গিয়ে এবারের সম্মেলকে সেসব পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি জমা হওয়ার কথা রয়েছে।

নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ প্রতি বছর হিমালয়ের বরফজমা স্বাদু পানির ওপর নির্ভর করে, কিন্তু উষ্ণতা বাড়ায় সেখানকার পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। দক্ষিণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি প্রকট হয়ে উঠেছে। সেখানে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া হবে আরেকটি ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন। বাংলাদেশ যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, তাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য আমাদের খুব সামান্যই দায়ী করা যেতে পারে। তার পরও আমরা এর সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা কেবল এ কারণে নয় যে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রভাবকে এড়াতে চাই; এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়ও আছে। কার্বন-শূন্য উৎপাদনে বিনিয়োগের মাধ্যমে পুরো অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান তৈরি করাই সর্বোত্তম পন্থা এবং এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সমৃদ্ধিও নিশ্চত হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন এই বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারে। কিন্তু প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে যা প্রয়োজন, সেটা হলে, আমাদের (বাংলাদেশ) জলবায়ু সমৃদ্ধির পরিকল্পনার একটি আন্তর্জাতিক সংস্করণ।’

গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনকে সেই পরিকল্পনা তৈরির ‘সবচেয়ে সেরা সুযোগ’ বলে মনে করলেও তার সম্ভাবনা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর লেখায়।

তিনি লিখেছেন, ‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তিন দশক আগে রিও আর্থ সামিটে উন্নত দেশগুলো পৃথিবীকে জলবায়ু এবং পরিবেশ সংকট থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা সম্মিলিতভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়েছে সাত ভাগের এক ভাগেরও কম। এটা তো নেতৃত্ব নয়। সবচেয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজনকেও তারা কখনো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লোকসান এবং ক্ষতির মুখে পড়া সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নের খবর নেই। যদিও সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যরা কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতি তারা নেয়নি, যা থাকলে ভরসা পাওয়া যেত যে, প্রতিশ্রুতি তারা সত্যিই পূরণ করতে যাচ্ছে। জলবায়ু তহবিলে প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারা ১২ বছরেও পূরণ করেনি।’

শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার, সেই তুলনায় ১০ বিলিয়ন ডলার খুবই সামান্য। সরকারি-বেসরকারি দুই দিক থেকেই এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ আছে, কিন্তু কোভিড সম্পর্কিত দেনার মধ্যে সেটা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। উন্নত দেশগুলো যদি সত্যিই সহায়তা করতে চায়, তাদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। তহবিলের খরচ কমিয়ে আনলে বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, যাতে সারাবিশ্বই লাভবান হবে। পশ্চিমা নেতারা যদি এই যুক্তিটা ধরতে না পারেন, নিজেদের ঘরের উদাহরণই তাদের সেটা বুঝতে সহায়তা করতে পারে। উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় চরম দাবানল কিংবা জার্মানির ভয়াবহ বন্যা-এসব কি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ীদের অঞ্চলে বেজে ওঠা সতর্ক ঘণ্টা নয়?’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, রক্ত আর বেদনায় জর্জরিত সেই জন্ম। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার স্মরণে আমরা আমাদের জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার নাম দিয়েছি মুজিব পরিকল্পনা। তার সময়ে তিনি যেসব সমস্যার মোকাবিলা করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সে তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রম। এ বিষয়টি মোকাবিলায় মনোবল, কল্পনাশক্তি, আশা এবং নেতৃত্ব প্রয়োজন।’

তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমা নেতারা যদি কর্ণপাত করেন, বিষয়টি অনুধাবন করে তাদের কাছে বিজ্ঞান যা দাবি করছে সে অনুযায়ী যদি তারা সিদ্ধান্ত নিতে চান, তাহলে কপ-২৬ কে সফল করে তোলার জন্য এখনো সময় আছে এবং এটা খুবই জরুরি।’

সময় জার্নাল/ইএইচ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল