শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

তাদের পায়ের চিহ্ন পড়বে না আর তিতুমীর ক্যাম্পাসে

শুক্রবার, অক্টোবর ২২, ২০২১
তাদের পায়ের চিহ্ন পড়বে না আর তিতুমীর ক্যাম্পাসে

মো. মাইদুল ইসলাম: "কহিল সে কাছে সরি আসি- “কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী- গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।” প্রিয় মানুষ, কাছের মানুষদের চাইলেই ভুলে থাকা যায় না। পদে পদে মনে পড়ে তাদের। তাইতো কবি বলেছেন, তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে। ক্লাস রুমে, সেমিনারে আড্ডা দেয়া, লাইব্রেরিতে বসে বই পড়া, ক্যাম্পাসের আড্ডায় খুনসুটি, শাকিল চত্বরে এক সাথে চা খাওয়া, কিংবা সুযোগ পেলেই রাজধানীতে চড়ে বেড়ানোর সময়, সৃতিময় সময়ে সেলফিতে সব কিছুতেই সে বন্ধুটির অনুপস্থিতি পোড়াবে তাদের। প্রিয় ক্যাম্পাসে করোনাকালে হারানো সহপাঠী, শিক্ষককে কিভাবে ভুলবে তারা? করোনার আগে দিব্যি হাসিখুশি থাকা মানুষটার; পায়ের চিহ্ন পড়বে না আর এই বাটে ভাবতেই শিওরে উঠবে অনেকেই। 

দেশে আগমন ঘটলো প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে বন্ধ করে দেয়া হলো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাসে আবারো ফেরার। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালা বন্ধই থাকে। দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে খুলেছে স্কুল কলেজ। ধীরে-ধীরে পরীক্ষা ও ক্লাসের মাধ্যমে প্রাণ ফিরছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ২৪ তারিখ ক্লাসরুমের তালা খুলছে  ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের ও। 

২৪ তারিখ আবারও জনস্রোত দেখা যাবে সংখ্যার দিক থেকে সর্বাধিক শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে। মেতে উঠবে তিতুমীরের প্রাঙ্গণ, মুখরিত হলেও ক্যাম্পাসে ফিরতে ক্ষণ গোনা অনেকেই আর কখনোই পা ফেলবে না তার প্রিয় প্রাঙ্গণে। তারা চলে গেছে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়ে। মহামারীকালে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষক ও পাঁচ শিক্ষার্থী চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। আড্ডায়-খুনসুটিতে মেতে থাকা ক্যাম্পাসে সহকর্মী, সহপাঠীরা পদে-পদে মনে করবে তাদের, হবে আবেগে আপ্লুত। 

গতবছরের শেষের দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফেরার দেশে চলে যান তিতুমীর কলেজের পরিচিত মুখ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইফুল হক।  করোনা উপশম নিয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন অধ্যাপক সাইফুল হক। পরবর্তীতে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালেই ২৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। 

স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেল ক্যাম্পাসে জীবনের শুরু হতে না হতেই। মাকে বাঁচাতে যেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেয় পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের (১৯-২০ সেশনের) শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান সৈকত। ১২ নভেম্বর নিজ বাড়িতে তার মা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে, মাকে বাঁচাতে ছুটে যান নাইমুর। মা বেঁচে গেলেও, সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে নেই নাইমুর।    

ফাইনাল পরীক্ষায় আর বসা হলো না রাকিবের। একদিন বাদেই ফাইনাল পরীক্ষা। অন্য সব সহপাঠীর মতো তারও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার সব প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহ ডেঙ্গু কেড়ে নিল  ব‍্যবস্হাপনা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী এইচ রাকিবের প্রাণ। ডেঙ্গু সনাক্তের পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে৷ পরে সেখানেই ৭ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন তিনি৷

দীর্ঘদিন ড্যামেজ কিডনির সাথে লড়াই  করে না ফেরার দেশে চলে যান পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষ  (১৭-১৮) সেশনের পরিচিত মুখ, মেধাবী ছাত্র জুলকার নাইন প্রান্ত। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার রেনেসা হাঁসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

যাকে ক্যাম্পাসে ফেরাতে করোনাকালেও এক হয়েছিলো তিতুমীরিয়ানরা, কিন্তু  ফেরানো গেলো না রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সম্পা কে। ২৬ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত শম্পা কয়েকমাস ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার পরিবার চিকিৎসার সব খরচ বহন করতে না পারায় তার পাশে দাঁড়িয়েছিল তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রশাসন।

কলেজের শিক্ষকবৃন্দ ও সবগুলো সংগঠন একত্রিত হয়ে শম্পার চিকিৎসায় অর্থ সংগ্রহের জন্য কাজ করেছিলো। নিজেরা আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে কলেজভিত্তিক সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

করোনাকালেও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। এ বছরের ১ জুলাই বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুর মহানগরের নাওজোর এলাকায় সড়কে প্রাণ গেছে তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাকুরুল ইসলাম সায়েলের। 

সায়েল মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। সেসময় পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা একটি পিকআপ তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে গুরুতর আহত হয় সায়েল। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক‌্যাল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

জুলকার নাইন প্রান্তের সহপাঠী শামিমা জান্নাত রিতু বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই তাদের কাছের মানুষদের হারিয়েছে। আমিও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাকে হারিয়েছি। ছোট থেকে একসাথে বড় হওয়া, এরপর একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা আমাদের। এতদিন পর ক্যাম্পাস খুললে সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাকে অবশ্যই খুব মিস করব। একসাথে ক্লাস করা, সেমিনারে আড্ডা দেয়া, লাইব্রেরিতে বসে বই পড়া, কিছুই আর হবে না। এই বিষয়গুলো কলেজ খুললে অনেক বেশি মনে হবে।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল