স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কারও ওপরে বাংলাদেশ। তবুও নিউজিল্যান্ডে গিয়ে কেন জানি পেরে ওঠা হয়না টাইগারদের। তাসমান সাগর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দেশটিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২৬ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, কিন্তু জয় মিলেনি একটিও। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ২৬-০! কিউই বান্ধত্ব ঘুচানোর আরেকটা মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ ভোরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নামবে তামিম ইকবালের বাংলাদেশ।
ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শুরু হবে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায়। বাংলাদেশিদের জন্য সময়টা বড্ড বেখাপ্পা, ভোর ৪টা। তবুও ঘুম দিবস ভুলে নিশ্চয় অনেকেই টিভি সেট খুলে বসবেন! তামিম-মুশফিকরা লড়বেন যে একটা কলঙ্ক মোছার মিশন নিয়ে।
ভোরে কিউই বান্ধত্ব ঘুচানোর মিশনে নামবে তামিম-মুশফিকরা। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর মাঠে ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তবে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেই দুর্দান্ত পারফর্ম করা সাকিব আল হাসানকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেলছেন না সাকিব। সেই সাথে কিছু অবস্থাগত প্রতিবন্ধকতাও আছে।
বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছে গত ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে। আর প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে মার্চের ২০ তারিখে, অর্থাৎ প্রায় এক মাস! অতীতে কখনো সিরিজের এতো আগে কোনো দেশে সফর করেনি বাংলাদেশ। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার এতো কিছু। প্রথম কয়েক দিন ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে, পরে কিছু সময়ের জন্য বেরুতে পারলেও একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডে কোয়ারেন্টাইনের সময়টা যে কঠিন ছিল সেটা সব ক্রিকেটারই বলেছেন একবাক্যে। তবে সব প্রতিবন্ধকতা একপাশে রেখে বাংলাদেশ এবার নিউজিল্যান্ডে জয়ক্ষরা ঘুচাতে মরিয়া, অধিনায়ক তামিম ইকবাল সেটা সরাসরিই বলেছে।
কোয়ারেন্টাইন শেষে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। একফাঁকে প্রমোদ ভ্রমণে গিয়ে মনকে চাঙা করার চেষ্টাও করা হয়েছে। প্রথম ম্যাচের আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলছিলেন, 'আমরা এখানে এখনো ভালো কিছু করতে পারিনি, তবে এবার সুযোগ আছে। আমাদের ভালো করার জিদ আছে। আর সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমি প্রত্যেকটা প্লেয়ারের সাথে কথা বলি তখন দেখি তারা খুব পজিটিভ। এটা খুবই ভালো। আমি যেটা বললাম এটা কাজ করতে পারে, আবার নাও পারে। তবে আমি যা বলেছি এখন আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী।'
ক্রিকেটে একটা কথার প্রচলন আছে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দেশে ভালো করতে হলে ভালো পেস বোলিং অ্যাটাক থাকতে হবে। তামিমের মতে, বাংলাদেশ এবার শক্ত একটা পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডে। সেই কারণেই আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক। বলছিলেন, 'সত্যি কথা আমাদের পেস বোলিং অ্যাটাক হয়তোবা আগে যতবার এসেছি তার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। ভালো অবস্থায় আছে অবশ্যই ভালো করাও লাগবে কিন্তু এতটুক বলতে পারি যে এখন যে গ্রুপটা আছে পেস বোলারদের, তারা খুবই ভালো। দ্বিতীয়তো আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় বিদেশ সফরগুলোতে নিজের প্রতি বিশ্বাস। আমার কাছে মনে হয় যে দলে বিশ্বাস আছে তারা কিছু করতে চায়। তো ওইটাই আমি আশা করছি যে আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই যে লক্ষ্য আমাদের ভালো করার সেটা যেন আমরা ফুলফিল করতে পারি।'
ম্যাচ শুরুর আগে প্রতিপক্ষ শিবির থেকে একটু 'সুখবর'ও অবশ্য পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে খেলছেন না নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রস টেলর। উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে কিউইদের নেতৃত্ব দিবেন টম লাথাম। অভিজ্ঞ লাথামের আবার এটা ১০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। নিশ্চয় আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। তবে ম্যাচ জিতে স্মরণীয় সময়টা যে আরও স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন সেটা বলেই দিলেন তিনি।
এই ডানেডিনেই অভিষেক হয়েছিল লাথামের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচটা নিউজিল্যান্ড বড় ব্যবধানে জিতেছিল। সেই ডানেডিনে যখন ক্যারিয়ারের ১০০তম ওয়ানডে খেলতে নামছেন লাথাম তখন অধিনায়ক। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, 'আমার মনে আছে আমার প্রথম ওয়ানডে আমি এখানে (ডানেডিনে) খেলেছি। এটা দুর্দান্ত ব্যাপার যে প্রথম ও শততম ওয়ানডে একই ভেন্যুতে খেলা। আমার পরিবার ও বন্ধুরা সেদিনও এখানে ছিল এ সপ্তাহেও আছে। আমরা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছি এবং জয় পেয়েছিলাম।'
প্রথম ম্যাচে জয়ের কথাও বললেন নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক, 'এটা অনেক বড় গর্বের ব্যাপার। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক হতে পারাটা সম্মানজনক। এটি এমন কিছু যা আপনার স্বপ্ন ছিল। আর এই সুযোগ আসাটা সত্যি দারুণ। আশা করছি সিরিজটি ভালোভাবে শুরু করতে পারবো।'
ডানেডিনে লাথামের যেমন উজ্জ্বল স্মৃতি, বাংলাদেশের তার উল্টোটা। এই মাঠে দুই ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। একটি ১০১০ সালে, অন্যটি ২০১৯ সালে। প্রথমটিতে ৫ উইকেটে হার, দ্বিতীয়টিতে ৮৮ রানে। ডানেডিনে ইউনির্ভাসিটি ওভালে গ্যালারি নেই বললেই চলে। ঘাসে বসে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলা দেখে, ধারণক্ষমতা মাত্র সাড়ে ৪ হাজার। উইকেটে ঘাসের রাজত্ব থাকে। আউটফিল্ড ফাস্ট, ছোট মাঠ বলে বাংলাদেশ কোচ রাসের ডোমিঙ্গো বড় স্কোরের ম্যাচের সম্ভাবনা কথা বলেছিলেন। ফাঁকা মাঠে তীব্র বাতাস থাকে সব সময়ই, সাথে কনকনে ঠান্ডা। বাংলাদেশিদের সেসবেও মানিয়ে নিতে হবে।
সব জয় করে কিউই বান্ধত্ব ঘুচাতে পারবে তামিমের দল? উত্তর মিলবে সকালে।
সময় জার্নাল/এমআই