সময় জার্নাল প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের প্রথম স্থান অধিকারকারী সাখাওয়াত জাকারিয়ার ওপর হামলা করা হয়েছে। একটি কোচিং সেন্টারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানী ফার্মগেইটের ফোকাস কোচিং সেন্টারের একটি কক্ষে জাকারিয়ার ওপর হামলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাকারিয়া ফোকাসের ফার্মগেইট শাখায় ছিলেন। এ সময় কয়েকজন লোক সেখানে ঢুকে জাকারিয়াকে বাইরে বের করার চেষ্টা করেন। তখন জাকারিয়া বাইরে যেতে না চাইলে কয়েকজন তার মাথায় চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর তারা বাইরে চলে যান।
জাকারিয়ার অভিযোগ, হামলাকারীরা একটি কোচিং সেন্টারের। তবে তিনি সেই কোচিং সেন্টারের নাম বলেননি।
ফোকাস কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষের দাবি, হামলাকারীরা আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের স্টাফ। যদিও ‘আইকন প্লাস’র এক প্রতিনিধি হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে, এই ঘটনার পর জাকারিয়া তার ফেসবুক পেজে ঘটনাটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ফোকাস ফার্মগেট শাখায় আছি। লাইভের সময় হঠাৎ বাইরে হুড়োহুড়ি। কিছুক্ষণ পরে কিছু লোকজন ঢুকল। ঢুকেই বলল এই তোরা কি মিটিং করোছ নাকি। এসেই ফোকাসের ভাইদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করল। আমারেও বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু যাইনি। এক পর্যায়ে টানাটানি। তাতেও না নড়ায় এক কালো পান্ডা মাথায় থাপ্পড় দিল। শেষ পর্যায়ে ফোকাসের ভাইদের বাইরে পাঠিয়ে দিল। এক পর্যায়ে দেখলাম এক কোচিং এর কিছু টিচার। আসছিল জোর জবরদস্তি করে বলাবে জাকারিয়া আমাদের কোচিং এর।
আমার যদি কিছু হয় তাহলে তারা দায়ী। এখন ফার্মগেটই আছি। টিচাররূপী কিছু কুলাঙ্গারও চলে গেল। মওদুদ ভাইয়া এবং আলামিন ভাইয়ারাও সব জানে।
কোচিং এর নাম বললাম না। ক্ষমা করে দিব বলছি। তাই ক্ষমা করে দিলাম। আশা করি আর জীবনেও এমন কাজ করবেন না। এবং টিচাররূপী কুলাঙ্গারগুলোও মানুষ হবেন। আমি ফোকাসেই কোচিং করেছি। অন্য কোথাও কোচিং করিনি।’
এদিকে মোহাম্মদ লিমন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জাকারিয়াকে আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী দাবি করা হয়। তিনি স্ট্যাটাসে লিখেন, আইকন প্লাস যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ১ম স্থান অধিকারী জাকারিয়াকে অভিনন্দন।
মোহাম্মদ লিমন আইকন প্লাসের শিক্ষক বলে জানান কোচিং সেন্টারটির সমন্বয়ক আজিজ খান।
জাকারিয়া এই স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে তিনি লিখেন, ‘হুদাই। আমি একটা ফ্রি ক্লাস করছিলাম। তখন ওরা পরীক্ষা নিছিল। ওখানে ফার্স্ট হইছিলাম। ফ্রি ক্লাস করলেই কোচিং এর ছাত্র হয় জানতাম না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফোকাস কোচিং সেন্টারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর জাকারিয়া আমাদের কোচিং সেন্টারের প্রধান কার্যালয়ে আসে। তখন আমরা তাকে সংবর্ধনা দেই। এ সময় একই বিল্ডিংয়ে থাকা আইকন প্লাসের কয়েকজন এসে তাকে নিয়ে যেতে চান। এখানে আমাদের প্রতিনিধিদের বের করে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জবরদস্তি করেন। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়।
সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, ‘আমি ফোকাস অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা স্থানীয় গুণ্ডাদের নিয়ে এসে আমাকে জিম্মি করে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় তারা ফোকাসের শিক্ষকদের বের করে দিয়ে আমাকেও টেনে নিতে চেষ্টা করে। আমি না যেতে চাওয়ায় তাদের একজন আমাকে মাথায় থাপ্পড় দেয়।’
এ বিষয়ে জানতে আইকন প্লাসের সমন্বয়ক আজিজ খান বলেন, সেখানে ঝামেলা দেখে আমাদের কয়েকজন দেখতে যায়। কিন্তু আমাদের কেউ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
আজিজ খান দাবি করেন, জাকারিয়া প্রথমে আমাদের কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তিনি এটা অস্বীকার করায় আমরা তাকে নিয়ে আর কোনো কিছু করিনি।
তবে, জাকারিয়াকে আইকন প্লাসের ছাত্র দাবি করা শিক্ষক লিমন ওই কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত বলে জানান আজিজ খান।
প্রসঙ্গত, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী জাকারিয়া। পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৮০ দশমিক ৫। দাখিল ও আলিমের ফলসহ মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০০ দশমিক ৫। জাকারিয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। ভর্তি পরীক্ষায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
সময় জার্নাল/এসএ