সময় জার্নাল প্রতিবেদক :
চিকিৎসাসেবা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আর রোগীদের দেশের বাইরে যেতে হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস উপলক্ষে আই (চক্ষু) ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের উদ্যোগ মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নতুন চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোর অনেক উন্নয়ন সাধন করেছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনা মোকাবিলায় ও রোগীদের চিকিৎসাসেবাদানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বগ্রহণের পর নতুন নতুন বিষয় চালু হচ্ছে। ১লা নভেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ জরুরি বিভাগ চালু হয়েছে, এর খুব প্রয়োজন ছিল। আই ব্যাংক সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা একটি মহতী উদ্যোগ। কর্ণিয়ার অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না বলে তারা পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আই ব্যাংক চালু হওয়া এই সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে। আই ব্যাংকটি যাতে কর্ণিয়ার পূর্ণ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে দেশের ৩০ শতাংশ মানুষকে করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা প্রদান করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মরণোত্তর চক্ষুদানে সকলে এগিয়ে আসলে অন্ধত্বমোচন সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আই ব্যাংক চালু হওয়ায় অন্ধত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মৃত ব্যক্তির চোখের কর্ণিয়া ৬ ঘণ্টার মধ্যেই সংগ্রহ করতে হবে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিনামূল্যে গরীব রোগীদের চোখের ছানি অপারেশন, কৃষকদের বিনামূল্যে চশমা প্রদান, ভিটামিন এ কর্মসূচী মানুষের দৃষ্টিশক্তি সঠিক রাখতে বড় অবদান রাখছে।
অন্য বক্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে এই প্রথম প্রতিষ্ঠিত হলো আই ব্যাংক। আই ব্যাংক হলো মরণোত্তর চক্ষুদান করার মাধ্যমে চোখের কর্ণিয়া সংরক্ষণ করা এবং যে সকল রোগী কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে তাদের মধ্যে তা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশে সরাসরি মরণোত্তর চক্ষুদান করার ব্যবস্থা খুবই সীমিত পরিসরে থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে এখন থেকে স্বল্পতম খরচে অন্ধ রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করবে, যা বেসরকারি খাতে অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এই আই ব্যাংক এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করার মাধ্যমে তা বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে এবং কর্ণিয়া জনিত অন্ধত্ব দূরীকরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, মেডিক্যাল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ জাফর খালেদ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগে চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ শওকত কবীর প্রমুখসহ শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আই ব্যাংক উদ্বোধনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোঃ খুরশিদ আলম। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।