এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে পুলিশের চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষার তালিকায় ১৩ তম স্থান হয়েছেন বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বারাংকুলা কুমার পাড়ার কুমারের কাজ করা সুবোধ পালের ছেলে সুব্রত পালের। অনেক কষ্টে পড়াশোনা করে তিনি অনেকটা স্বপ্নের মতো সুযোগ পেয়েছেন পুলিশের চাকরিতে। কোনদিন ভাবেন নাই দিন আনি দিন খাই পরিবারের সুব্রত কোনো রকম ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে। পুলিশে চাকরির সুযোগ পেয়ে তিনি এখন পরিবারের হাল ধরবেন এটাই তার এখন একমাত্র স্বপ্ন।
চরভদ্রাসনের পদ্মার চরের সালেহপুর এলাকার বাসিন্দা সুলতান। তার বাবা রাশেদ মোল্যা একজন ঘোড়ার গাড়িচালক। চর এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে সংসার চলে তার। বাবার অজান্তে তার স্বপ্নের পুলিশ হওয়া পরীক্ষায় অংশ নেন আবেদন ফরম তিন টাকা, ব্যাংক ড্রাফট ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ৩০ টাকা মোট ১৩৩ টাকা খরচ করেন। এরপর সব ধাপ পেরিয়ে চুড়ান্ত তালিকায় স্থান হয়েছে তার।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বাইখির গ্রামের ইকবাল সেখ। তার বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। কোনোমতে তার সংসার চলে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সন্তান পুলিশে সুযোগ পাওয়ায় এখন পুরো পরিবারে খুশির ঝিলিক। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে এতদূর এসে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে টিউশনি করে চলতে হতো ইকবালকে। পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় এসেছে ইকবালের নাম। বৃহস্পতিবার রাতে চূড়ান্ত ফলাফলে ঘোষণার নিজের নামটি শোনার পর চোখ অশ্রুতে ভরে যায় ইকবাল ও তার বাবা ইকরাম হোসেনের। শুধু সুব্রত,সুলতান আর ইকবাল হোসেনই নয় এভাবে তাদের মতো পুলিশে চাকরি হওয়া ৪০ জনের জীবনের গল্প প্রায় একই।
ফরিদপুরে শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১৩৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন মোট ৪০ জন।যাদের কারো বাবা কৃষক, কারো বাবা দিনমজুর-শ্রমিক, কারো বাবা রিকশাচালক।
ফরিদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে এবার ১৬০০ জন পরীক্ষার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এ পরীক্ষায় ৩৪৮ জন উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ৭৯ জন। সেখান থেকে চূড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছে ৪০ জনের। এর ভেতর চারজন নারী রয়েছেন। এছাড়াও অপেক্ষমান রয়েছে সাধারণ কোঠায় ১২ জন ও পোষ্য কোঠায় তিনজন।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, আইজিপি স্যারের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও চেষ্টার কারণেই শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের সাতটি ধাপ পেরিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে তারা চূড়ান্ত তালিকায় আসতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম। দালালরা যাতে প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে, সেজন্য পুলিশের একাধিক দল মাঠে ছিলেন।
সময় জার্নাল/এলআর