নিজস্ব প্রতিবেদক। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও এর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ৩ দিনের ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে।
রবিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ব্যবসায়ীদের দাবি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্যে। এছাড়া ধর্মঘটের কারণে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু, পটল, টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচসহ বেশির ভাগ সবজির দাম পরিবহন ধর্মঘটের আগের তুলনায় পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদী, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে সবজি আনতে আগে যে ট্রাকের ভাড়া ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, এখন সে ট্রাকের ভাড়া ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা। সেই বাড়তি ভাড়া পণ্যের সঙ্গে যোগ করেই পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত বছর করোনার শুরুতে যে দাম বাজারে ছিল তার চেয়ে এখন সব ধরনের পণ্যে ২০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি। গেল দুই সপ্তাহে বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও সবজির দাম। পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ। যে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে কেনা যেত, তা কিনতে এখন ৭০ টাকা লাগছে। ১২৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়ে গেছে। দুই দিন আগে যে বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেই বেগুন এখন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া যে সাইজের ফুলকপি দুইদিন আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুইদিন আগে বাজারগুলোতে শিম বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকায়, একই মানের শিম এখন বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।
এর আগে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০-৫৫ টাকায় মিললেও এখন একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা দামে। এ ছাড়া খুচরা বাজারগুলোতে ঢেঁড়স কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মূলা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে বেশির ভাগ সবজিই একদিন আগে মান ও প্রকারভেদে কেজিতে প্রায় ৫ থেকে ১০, ১৫ টাকা কমে পাওয়া গেছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবু ইউসুফ জানান, শনিবার তো সবজি কিনতেই গিয়ে আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা। হঠাৎ এতো দাম যে বাড়বে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। দিন দিন শুধু দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। এসব দেখার কেউ নাই।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পাইকারিতে দাম বাড়ালে তাদের করার কিছু থাকে না।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। সাধারণত দেখা যায় অক্টোবর মাসে শাক-সবজির দাম চড়া থাকে। তারপর শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। তখন বাজারে একটু স্বস্তি নামে। এবারো অক্টোবর মাসে দাম চড়া ছিল। যে সময় শীতের সবজি বাজারে আসছে। দামও কমের দিকে যাচ্ছে। এমন সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় ভোক্তাদের মধ্যে যে স্বস্তি আসার কথা ছিল, সেটি সম্ভবত আর আসবে না।
সময় জার্নাল/আরইউ