মুহা: জিললুর রহমান। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১০টিতে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহীদের চাপের মুখে আওমী লীগের নৌকার প্রার্থীরা একরকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে থাকা বিদ্রোহীরা খুবই শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
বাঁধা বিঘ্ন উপেক্ষা করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রায় সামান তালে প্রচার প্রচরণায় অংশ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তারা নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে। নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ হলে বিদ্রোহীরা ভাল করতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা।
আগামি ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৬৪ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা পদে ১৬০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৪৯১জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বৈকারী, কুশখালী, ফিংড়ী ও ধুলিহর এবং শিকপুর ইউনিয়ন ব্যতিত বাকি ৮ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সরাসরি বিএনপির পদে থাকা নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন।
এ দিকে ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১২ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ঘোনা, বৈকারী ও বাশদাহ ইউনিয়নে জাতীয়পার্টির ৩ জন প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এদিকে আগরদাঁড়ি, ঘোনা ও বৈকারী ইউনিয়নে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আর ইসলামি শাসনতন্ত্র বাংলাদেশ থেকে ৩ জন প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘোনা ইউনিয়নে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নৌকার প্রার্থী মোঃ ফজলুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কাদের মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সদর উপজেলার পশ্চিম জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশারাফ হোসেন চশমা প্রতীক ও জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভূট্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠ রয়েছেন মোঃ বদরুজ্জামান বাবলু।
এদিকে লাবসা ইউনিয়নে থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।
এদিকে ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির দুই প্রার্থী মাঠ দাপাচ্ছেন। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে এখানে থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলামও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। ইসলামি স্বাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর ইবাদুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
শিবপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া হাতপাখা প্রতীকের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ইমাদুল হোসেন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়নে থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ মইনুল ইসলাম নৌকার প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোঃ মজনুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ধুলিহর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান বাবুর প্রতিপক্ষ হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান চৌধূরী। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠ দাপাচ্ছেন। এখানে স.ম মসিউর রহমান ফিরোজ মটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
এদিকে কুশখালি ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ মোট ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের গলারকাটা হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন পলাশ চশমা প্রতীক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ মনিরুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এখানে জাতীয়পার্টির প্রার্থী হিসেবে মুনসুর আলী সরদার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোমরায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, সাবেক চেয়ারম্যান সামছুর রহমান ও সাহেব আলী। এদের মধ্যে দুইজন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা নৌকার প্রার্থী আজমল হোসেনর বিরুদ্ধে বিদ্্েরাহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি জয়দেব কুমার ঘোষ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে থানা বিএনপির যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।
বল্লি ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ খাইরুল ইসলাম মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে উপজেলা বিএনপির সদস্য এ্যাডঃ মহিতুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন।
বাশদাহ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান নৌকা প্রতিক পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান এস এম মোশারাফ হোসেন আনারস প্রতীক ও ইউনিয়ন বুবলীগের সভাপতি আব্দুল খালেক টেলিফোন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। এখানে বিএনপি নেতা এবিএম বদরুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয়পার্টির নেতা শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল।
বৈকারী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অছলের বিরুদ্ধে তরুন লীগ নেতা আবু মোঃ মোস্তফা কামাল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জালাল উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। শেষ মুহর্ত্বে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদেও গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছেন বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সময় জার্নাল/আরইউ