নিজস্ব প্রতিনিধি: চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে এ বছর রেকর্ড ৫১.৭ শতাংশ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ পার্সেন্ট বেশি।
অভয়াশ্রম পরবর্তী গবেষণায় এমনই চিত্র ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান।
অভিযানের সঠিক সময় নির্ধারণ আর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে ডিম ছাড়ায় সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে এ বছর। আগামী মৌসুমে নতুন করে আরও প্রায় ৪০ হাজার কোটি ইলিশের পোনা (জাটকা) নদীতে উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে জেলে ও ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন মিশ্র মতামত। তাদের দাবি, মা ইলিশের অভিযান শেষে ধরা পড়া অনেক ইলিশের পেটে এখনো রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম। অন্তত ১০ দিন আগেই এ বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। প্রজননের এই প্রধান সময়টাতে পরিভ্রমণ স্বভাবের মাছ ইলিশ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে।
ইলিশের ডিমের পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এই সময়টাতে নদীতে মাছ ধরা, পরিবহন, বাজারজাতকরণ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্যমতে গত ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ পার্সেন্ট, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ পার্সেন্ট, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ পার্সেন্ট, ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ পার্সেন্ট এবং ২০২০ সাড়ে ৫১.২ পার্সেন্ট ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছর ৫১.৭ পার্সেন্ট মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ পার্সেন্ট বেশি।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণ স্বভাবের। প্রজননের সময়টাতে ইলিশ গভীর সমুদ্র ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে চলে আসে।
মা ইলিশের অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু অসাধু জেলে ইলিশ নিধনের পরেও এ বছর রেকর্ড ৫১.৭ পার্সেন্ট মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে।
জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এবং ইলিশের উৎপাদন পৌনে ৬ লক্ষ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে।
আরেক জেলে ইদ্রিস মিয়া বলেন, ইলিশ যেই পরিমাণে ডিম পাড়ছে, হেইডা যদি বাঁচানো যায়, তয় সামনে ইলিশের উৎপাদন বাড়বো। আমরাও বেশি ইলিশ পামু। এই জইন্য আগামী জাটকা অভিযান কটর করা লাগবো
উল্লেখ্য, পরিকল্পিতভাবে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান ও জাটকা অভয়াশ্রম কার্যক্রম পরিচালনার ফলে দেশে প্রতি বছরই ইলিশ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪.৯৭ লক্ষ মেট্রিক টন,২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। যা গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে ৫.৫ লক্ষ মেট্রিক টনে।
সময় জার্নাল/এলআর