মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন করে বিধিনিষেধ, ক্ষোভে ফেটে পড়ছে ইউরোপবাসী

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৩, ২০২১
নতুন করে বিধিনিষেধ, ক্ষোভে ফেটে পড়ছে ইউরোপবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মাত্র কয়েকমাস আগেই, ইউরোপে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন। সংক্রমণের গ্রাফ বা রেখা প্যানডেমিক শুরুর পর সবচেয়ে নিচুতে নেমে গিয়েছিল।

কিন্তু গত কিছুদিনে সংক্রমণ বহু হু করে বাড়ার কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার নতুন করে বিধিনিষেধ চাপানো শুরু করলে বহু মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর পর এ সপ্তাহে কোভিড নিয়ে ইউরোপের বেশ কটি শহরে রীতিমত দাঙ্গা হয়েছে।

বেশ কিছু শহরে ভাঙচুর হয়েছে, গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, পুলিশ দিকে পেট্রল বোমা ছুড়েছে মানুষজন। পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। কাঁদানে গ্যাস, জল-কামান ব্যবহার করতে হয়েছে যা ইউরোপে বিরল।

শুক্রবার রাত থেকে শুরু করে রোববার পর্যন্ত ইউরোপের বড় বড় বেশ কটি শহরে যে মাত্রার সহিংস বিক্ষোভ দেখা গেছে - তা সচরাচর চোখে পড়ে না।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সাথে দাঙ্গা পুলিশের রীতিমত যুদ্ধ হয়েছে।

মানুষজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর-পেট্রোল বোমা ছুঁড়েছে। তারা অনেক গাড়ি জ্বলিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ছাড়াও ঘোড়া এবং কুকুরের সাহায্য নিতে হয়েছে। এমনকি ফাঁকা গুলিও ছুঁড়তে হয়েছে - যার নজির ইউরোপে বিরল।

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে তিনি এই বিক্ষোভকে প্রতিবাদ না বলে ‘নেহায়েত সহিংসতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পাশের দেশ বেলজিয়ামেও প্রতিবাদ মিছিল হঠাৎ সহিংস হয়ে ওঠে। মানুষজন পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করে।

শনিবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মিছিল করেছে। কট্টর দক্ষিণপন্থী দল ফ্রিডম পার্টি এই বিক্ষোভ আয়োজন করে। বিক্ষোভ হয়েছে ইটালি, ডেনমার্ক এবং ক্রোয়েশিয়াতেও।

নেদারল্যান্ডসে কোভিড সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সরকার তিন সপ্তাহের জন্য আংশিক লকডাউন জারি করেছে। রেস্তোরাঁ ও পানশালা সন্ধ্যার পর তাড়াতাড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খেলাধুলার ইভেন্টে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বেলজিয়ামে ফেস মাস্ক পরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁয় কোভিড ভ্যাকসিনের পাস এখন বাধ্যতামূলক। সেইসাথে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সপ্তাহে কমপক্ষে চার দিন ঘরে বসে কাজ করতে বলা হয়েছে। জার্মানি, চেক রিপাবলিক, গ্রিসসহ ইউরোপের অনেক দেশে একই ধরনের বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে কড়াকড়ি করা হচ্ছে অস্ট্রিয়ায়। দেশজুড়ে সেখানে নতুন করে চাপানো হয়েছে লকডাউন, অর্থাৎ জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এছাড়া, অস্ট্রিয়া হচ্ছে ইউরোপের প্রথম কোনো দেশ যেখানে ভ্যাকসিন নেয়া আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই আইন কার্যকর করা হবে।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শালেনবার্গ বলেছেন, টিকা নিতে অনীহার কারণে এই আইন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচারণা এবং ভুয়া খবরে বিশ্বাস করে আমাদের মধ্যে অনেকে এখনো ভ্যাকসিন নেননি।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ভরে যাচ্ছে। অসহনীয় দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে।’ যেভাবে হঠাৎ ইউরোপে কোভিড সংক্রমণ আবার হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে সরকারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

যদিও বিশ্বের বহু অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপে ভ্যাকসিন নেয়া মানুষের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি, তারপরও গত ক সপ্তাহে এ অঞ্চলে কোভিড সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসে গত এক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণ বাড়ছে চার গুণ হারে। অস্ট্রিয়াতে এই বৃদ্ধির হার পাঁচ গুণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক ড হ্যান্স ক্লুগ বিবিসিকে বলেছেন, ইউরোপে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ‘খুবই উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে মার্চ নাগাদ ইউরোপ আরো পাঁচ লাখ মানুষ কোভিডে মারা যেতে পারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নতুন করে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করছে তাকে সমর্থন করেন ড ক্লুগ।

তবে, তিনি বলেন, তাতে তেমন কাজ না হলে শেষ উপায় হিসাবে অস্ট্রিয়ার মত টিকা বাধ্যতামূলক করার পথে যেতে হবে। ডব্লিউএইচও কর্মকর্তা মাস্ক ব্যবহার কড়াকড়ি করার পক্ষে। সেইসাথে তিনি রেস্তোরাঁ বা স্টেডিয়ামের মতো জায়গায় কোভিড টিকা পাস বাধ্যতামূলক করার পক্ষে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হঠাৎ দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করেছে।

বছরের গোঁড়ার দিকে সংক্রমণ কমায় এবং সেইসাথে ভ্যাকসিনের বিস্তারের ভরসায় ইউরোপের অনেক দেশে মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সাবধানতা শিথিল করলে ভ্যাকসিন নেয়া মানুষদেরও কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঘায়েল করতে সক্ষম।

কিন্তু একটাই ভরসার কথা যে সংক্রমণ দ্রুত বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। ভ্যাকসিনের বদৌলতে সংক্রমিত হলেও খুব কম মানুষই গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে। ভ্যাকসিন নেয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও কম।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল