ছেলেটা ফিরে এসেছিলো
ছেলেটা ফিরে এসেছিলো,
ততদিনে গাঁয়ের লোকেরা তাকে ভুলেই গেছে।
বটতলায় বুড়োদের আসরে,
তাকে নিয়ে হা-হুতাশ হতো না আর,
মোষের গাড়ি নিয়ে ফিরে আসা হাটুরেরা,
তার বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময়
চকিতে চাইতো না আর পরিত্যক্ত ভিটেয়।
ঘাস গজিয়েছিল দাওয়ার ওপর,
একটা উটকো ঘেয়ো কুকুর
রোজ রোদ পোহাতো তার দাওয়ার ওপর।
ঐ কুকুরটাই বোধ করি তার জেলে বাপের পোষা ছিলো।
যখন সে মাছ ধরতে গাঙে যেতো,
খালুই মুখে নিয়ে লেজ নাড়াতো পিছু পিছু,
কেবল এই প্রাণীটাই মায়া টুকু ধরে আছে।
ছেলেটা ফিরে এসেছিলো
যখন পৌষের মেলায়,
তাকে নিয়ে গান বাঁধা হয় না,
কেউ আর শুনতে চায় না তার গল্প,
শুনতে শুনতে যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে।
অথচ প্রথম দিকে তার গল্পটা ছিলো বেশ জমজমাট।
পাড়া গাঁয়ে এরকম কদাচিৎ হয়,
অভাগা জেলের ঘরে এত ভালো ছেলে!
এতো এতো পাশ দিলো,
সোনার মেডেল পেলো,
লাটসাহেবের মতো চকচকে রঙিন জীবন।
আর ফিরে আসেনি সে,
কতকাল কেটে গেলো কেউ তাকে দেখেনি।
হতভাগী জননীটা শোকেই মরলো শুধু,
যদিও সবাই বলে ভাতের অভাব।
জেলে বাপটার কথা নাইবা বলি আজ,
হাটে, মাঠে, ঘাটে তাকে যেতেই হতো,
কতো কানাঘুষো আর কতো প্রশ্ন,
অন্তরাত্মা বুঝি গজরাতো শুধু।
ছেলেটা ফিরে এসেছিলো শেষ বয়সে,
শহরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে,
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত আর নিঃসঙ্গ পাখির মতো,
ততদিনে বুনো ঝোপে ঢেকে গেছে,
ফেলে যাওয়া মা আর বাবার কবর।