ড. শোয়েব সাঈদ
৩১শে জুলাই কলাম লিখেছিলাম-
ডেল্টা কেন এত বিপদজনক? চার মাস পর আমাদের নতুন ভাবনা ওমিক্রনকে কেন এত ভয়? ভ্যাকসিন সফলতার মাঝেও কোভিড কাহিনী হইয়াও হইল না শেষ।
মিউটেশন বা পরিবর্তন ভাইরাসের জন্যে প্রতিনিয়ত ঘটা সাধারণ ধর্ম। অনেকগুলো মিউটেশনের ফলে একটি ভাইরাস স্ট্রেইনে কিছুটা ভিন্ন ধরণের জেনেটিক লাইনের উদ্ভব হয় যাকে ঐ স্ট্রেইনটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট বলা হয়। ভাইরাস পোষক কোষে যেমন কোভিড ভাইরাস আমাদের দেহের কোষে প্রবেশ করে নিজেদের অসংখ্য কপি তৈরি করে। ক্রমাগত কপি করতে গিয়ে ভাইরাসের আরএনএতে কিছুটা ভুলভ্রান্তি বা ত্রুটি ঘটে থাকে যাকে আমরা মিউটেশন বলি। জেনে অবাক হবেন কোভিড ভাইরাসের শুধু স্পাইক প্রোটিন অংশে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মিউটেশন ঘটেছে।
ভাইরাসে মিউটেশনের ফলে এমাইনো এসিডের বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে এবং এই পরিবর্তনে ভাইরাসটি আগ্রাসী হয়ে উঠলেই বিপদ। মিউটেশনে ভাইরাস দুর্বলও হতে পারে, অবলুপ্তও হতে পারে; সেই ভাগ্য আমাদের এখনো হয়নি, বিপদের মধ্যেই আছি।
ওমিক্রনে মিউটেশনের পরিমান অনেক বেশী। মোট ৫০টি মিউটেশনের ৩২টি ভাইরাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিন সংক্রমণে এবং ভ্যাকসিন কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুশ্চিন্তার আরো কারণ হচ্ছে সংক্রমণের জন্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন বা আরবিডিতে রয়েছে ১০টি মিউটেশন। সহজবোধ্য উপস্থাপনায় মিউটেশনের বিন্যাস্তটিকে সাজাতে পারি এভাবে ৫০-৩২-১০।
আলফা ভ্যারিয়েন্টে মোট মিউটেশন ছিল ২৩টি, ৮টি ছিল স্পাইক প্রোটিনে আর আরবিডিতে ১টি। মিউটেশনের বিন্যাস্তটি হবে ২৩-৮-১।
বেটা ভ্যারিয়েন্টে মোট মিউটেশন ছিল ২০টির কাছাকাছি, ১০টি ছিল স্পাইক প্রোটিনে আর আরবিডিতে ৩টি। মিউটেশনের বিন্যাস্তটি হবে ২০-১০-৩।
গামা ভ্যারিয়েন্টে মোট ১৭ টি মিউটেশন ছিল, যার ১০টি ছিল স্পাইক প্রোটিনে আর আরবিডিতে ৩টি। মিউটেশনের বিন্যাস্তটি হবে ১৭-১০-৩।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মোট মিউটেশন ছিল ১৭টি, ৭টি ছিল স্পাইক প্রোটিনে আর আরবিডিতে ২টি। মিউটেশনের বিন্যাস্তটি হবে ১৭-৭-২।
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন আর আরবিডিতে মিউটেশনের ব্যাপকতা সবাইকে ভাবিত করেছে। ওমিক্রন শেষতক কতোটা ক্ষতিকর জানার জন্যে কয়েক সপ্তাহ তো অপেক্ষা করতেই হবে।
এবার একটু আশার কথা বলি। স্পর্শকাতর লোকেশনে বেশী মিউটেশন নিয়ে আলফা, বেটা, গামা কিন্তু ভোগান্তিতে ডেল্টাকে অতিক্রম করতে পারেনি। গামার স্পাইক প্রোটিনে তিনটি ভীতিকর মিউটেশন ছিল কিন্তু শেষতক হারিয়ে যায়।
ওমিক্রনে ভ্যাকসিন ফাঁকি দেবার কথা উঠেছে মিউটেশন ই৪৮৪ এর জন্যে। এই মিউটেশনটি কিন্তু বেটা এবং গামাতেও ছিল। ডেল্টাতে ছিল না কিন্তু ডেল্টা এ যাবৎ সবচেয়ে বেশী ভোগান্তির কারণ হয়েছে। স্পাইক প্রোটিন মিউটেশনে ভ্যাকসিনে কার্যকারিতার কম বেশী হলেও ভ্যাকসিনের সেফটি নেটকে ব্যাপকভাবে ফাঁকি দেবার সক্ষমতা অর্জন হয়তো সম্ভব নয়।
কানাডার ডাটা থেকে জানায় যায় উহানের আদি ভাইরাস থেকে আলফা, বেটা, গামা ভ্যারিয়েন্ট রোগীকে হাসপাতাল, আইসিইউ কিংবা মৃত্যুর দিকে যেতে যথাক্রমে ৫২%, ৮৯%, ৫১% অধিক সক্ষমতা দেখিয়েছে। আবার ডেল্টাকে অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর চাইতে দেড় থেকে দুইগুন ক্ষতিকারক বিবেচনা করা হয়।
ওমিক্রনকে মোকাবেলায় বিশ্ব যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে অনেক বেশী সক্ষম। সমস্যা হচ্ছে ইতোমধ্যে ধরাশায়ী অর্থনীতি আতঙ্কের ফলে আরো দুর্দশায় পতিত হবার বিষয়টি।
ওমিক্রন আতঙ্ক সত্যি সত্যি সংকট তৈরি না করে এমনিতেই হারিয়ে যাক।
লেখক : কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজিস্ট। কানাডার একটি বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত।
আরও পড়ুন : ডেল্টা কেন এত বিপদজনক?
সময় জার্নাল/এসএ