আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নভেম্বরের শুরুর দিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশের ল্যাবরেটরির গবেষকরা। তখনও তারা করোনা ভাইরাসের এমন কোনো জিন খুঁজে পাননি, যা মানবশরীরের কোষে প্রবেশ করতে এবং ছড়িয়ে দিতে স্পাইক প্রোটিন সৃষ্টি করে। সমসাময়িক ওই অঞ্চলের চিকিৎসকরা রোগীদের মধ্যে অবসন্নতা এবং মাথাব্যথা শনাক্ত করেন। এমন রোগীতে সয়লাব হয়ে যেতে থাকে। কয়েক সপ্তাহ পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত থাকার পর নতুন করে এমন ঘটনা হঠাৎই বৃদ্ধি পায়। এর আগে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট জোহানেসবার্গ এবং রাজধানী প্রিটোরিয়ার ওপর দিয়ে এক ভয়াবহতা সৃষ্টি করে যায়। কিভাবে এবারের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলো সে বিষয়ে এসব কথা লিখেছে অনলাইন ব্লুমবার্গ।
এ ঘটনা থেকে নতুন করে সংক্রমণের ঢেউ শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকারী স্ট্রেইন হয়ে ওঠে এই ভাইরাসের নতুন একটি রূপ। নতুন একটি ঢেউ সৃষ্টি হয় এতে। ২৫ শে নভেম্বর এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে ঘোষণা দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটে ধস নামে। বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্লাইট এবং সেখানকার যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মঙ্গলবার নাগাদ এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৫টি দেশে।
দক্ষিণ আফ্রিকান মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট গ্লেন্ডা গ্রে’র মতে, বেসরকারি মালিকানাধীন ল্যানসেট ল্যাবরেটরিজে প্রথম বিজ্ঞানীরা এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করেন। পরীক্ষা করতে গিয়ে কিছু অসঙ্গতি দেখতে পান তারা। এ বিষয়ে জানতেন না। তাই তারা ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের সতর্ক করেন। পরে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এর সিকুয়েন্সিং করা শুরু করেন।
৪ঠা নভেম্বর বিকেলে প্রাথমিকভাবে কাজ করতে গিয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তথ্য উদ্ধার করেন ল্যানসেটের জুনিয়র বিজ্ঞানী অ্যালিসিয়া ভারমুলেন। এদিন তিনি করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ এক ব্যক্তির রক্তে অস্বাভাবিকতা দেখতে পান। পরের সপ্তাহে একই রকম বহু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ল্যানসেটের মলিকিউলার প্যাথলজি বিভাগের প্রধান এবং সরকারের মিনিস্টেরিয়াল এডভাইজরি কাউন্সিল অন কোভি-১৯ এর সদস্য অ্যালিসন গ্লাসকে বিষয়টি জানানো হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস’কে সঙ্গে নিয়ে ল্যানসেট ২২ শে নভেম্বর নিশ্চিত হয় যে, নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট তারা শনাক্ত করেছে। তাকে চিহ্নিত করা হয় বি.১.১.৫২৯ হিসেবে। এর এস-জিন শনাক্ত করা যায়নি, কারণ তা রূপান্তরিত হয়েছে।
ওদিকে বোতসোয়ানার বিজ্ঞানীরাও নভেম্বরের শুরুতে কিছু পর্যটকের শরীর থেকে নেয়া নমুনায় অসঙ্গতি শনাক্ত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন ব্যক্তি হংকং ফেরার পর তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ঠিক এমন সময় এসব ঘটনা ঘটে। ২৪ শে নভেম্বর প্রাথমিকভাবে বৃটিশ মিডিয়ায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে রিপোর্ট হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিকোলাস ক্রিস্প বলেন, ২৪ শে নভেম্বর সন্ধ্যায় তাকে প্রথম এ বিষয়ে জানানো হয়। সরকার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের ওইদিনই সকালের দিকে জানানো হয়। দ্রুততার সঙ্গে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিন-সিকুয়েন্সিং ইনস্টিটিউটের প্রধান তুলিও ডি ওলিভেইরা প্রথম তাদের আবিষ্কার সম্পর্কে ঘোষণা দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ওমিক্রন হিসেবে নামকরণ করে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ওমিক্রন হালকা উপসর্গ সৃষ্টি করে। তবে এর সংক্রমণ ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এমআই