ডাঃ জোবায়ের আহমেদ :
মানুষের জীবনটা অদ্ভুত সুন্দর হতে পারে যদি মানুষ সুন্দর করতে চায়।
মানুষ জীবনে সুখী হতে পারে যদি মানুষ সুখ অনুভব করতে জানে।
চারদিকে দেখি হতাশাগ্রস্ত মানুষ।বিষাদের ছায়া চারপাশে।
মানুষ জীবনকে একটা পুরো বই না ভেবে একটা চ্যাপ্টার ভাবে কেন?
একটা বইয়ের একটা চ্যাপ্টার পড়ে খারাপ লাগার মানে নিশ্চয়ই পরের চ্যাপ্টার একই রকম অনুভূতি দিবে তা নয়।
একটা চ্যাপ্টার খারাপ হওয়া মানেই আপনার জীবন শেষ তা বুঝায় না।
একজন কেউ আপনার জীবনে খারাপ স্মৃতি দিয়েছে মানে সবাই তা দিবে তা কিন্ত নয়।
জীবন একটা পরীক্ষাক্ষেত্র।
কঠিন কঠিন পরীক্ষা জীবনে দিতে হয়।
কিন্ত অধিকাংশ মানুষ জীবনের পরীক্ষায় ফেল করে কারণ সবাই অন্যকে অনুকরণ করতে যায় সেজন্য।
অথচ জীবনের পরীক্ষায় সবাইকে আলাদা আলাদা প্রশ্নের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
একজনের সমস্যার সাথে অন্যের সমস্যার মিল নেই।
মানুষের শরীরের সবচেয়ে পবিত্র ও সুন্দর জায়গা হলো মন।
অদৃশ্য এই মনকে আমরা অনেকেই ডাস্টবিন বানিয়ে রেখেছি।
মনের মধ্যে রাখার কথা ভালবাসা, মায়া, দয়া,, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, শুভকামনা ও সুন্দর সব স্মৃতি কিন্ত আমরা মনে রাখি ক্রোধ, হিংসা, পরচর্চা, পরনিন্দা, কুৎসা ও মিথ্যা।
আজকাল চারদিকে তাকালেই দেখবেন কিছু মানুষ ডাস্টবিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদের থেকে দূরে থাকলেই আপনার জীবন সুন্দর হতে পারে।
জীবনের গতিপথ নদীর মত।
সরল নয়,আঁকাবাঁকা।
এটাকে উপভোগ করতে হয়।
ইসিজির লিডের সরল রেখা জীবন বুঝায় না, জীবনের অবসান বুঝায়।
জীবনে নীরব থাকতে শেখা উচিত।
কথা কম বলতে শেখা উচিত।
আপনার কথার চেয়ে নীরবতা মূল্যবান হলে নীরব থাকুন না।
একজন মানুষ আপনাকে আঘাত করেছে, কাঁদিয়েছে, বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে?
আপনি কি করবেন?
কিভাবে প্রতিশোধ নিবেন?
আপনি তাদের জানিয়ে দিবেন, তারা আর আপনার জীবনে কোন ভূমিকা রাখেনা
আপনার হাসি-কান্নার কারণ আর তারা নন।
কেউ কষ্ট দিলেই প্রতিশোধ নিতে হয়না।
Karma বলে যেই ব্যাপারটা আছে সেটার কোন সেট মেন্যু নেই।
আপনাকে তাই ফিরিয়ে দেওয়া হবে একদিন আপনি যা দিয়েছেন।
সবসময় মানুষের জন্য ভালো কিছু করার কথা ভাবুন।
কিছু করতে না পারলেও শুভকামনা জানান মানুষের প্রতি।
দেখবেন এরচেয়েও বেশি আপনার জীবনে ফিরে আসবে।
আমাকে কেউ গালি দিলে, কটুকথা শুনালে আমি গালি দেওয়া ঠিক কাজ মনে করিনা।
একজন আমাকে অসম্মান করলেও আমি ঠিক সেই কাজ করার পক্ষে না।
অন্যের আচরণ দ্বারা আমি প্রভাবিত হবার পক্ষে নই।
আমরা যেই ভুলটা করি আমরা অন্যের মনের মত হতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
যখন বুঝি তখন নিজের মত হতে গিয়ে সবাইকে হারিয়ে ফেলি।
অথচ আপনার নিজের মতই হওয়া উত্তম ছিলো।
আপনার লেখাপড়া, ডিগ্রি, ফলোয়ার, ধন সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্স এগুলো খুব একটা ব্যক্তিত্ববানদের প্রভাবিত করেনা।
আপনি মানুষকে কিভাবে ট্রিট করেন এটাই আপনার সম্পর্কে সব বলে দেয়।
মানুষ আপনাকে নিয়ে কি ভাবে এই চিন্তাটা বাদ দিতে হবে।
মানুষ যা ভাবে এটা তাদের মনোজগতের প্রতিফলন, এটা তাদের নিয়েই বেশি বলে, এটাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়ে কষ্ট পাওয়া বোকামি।
দেখুন অন্যের কষ্ট অনুভব করতে পারা একটা আর্ট,এটা সবাই বুঝতে পারেনা,কারণ সবাই তো আর্টিস্ট নহে।
আজকে যেই বিষয় নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন, একবছর পরে দেখবেন এটা আর ম্যাটার ই করেনা।
কেউ আপনার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে চায়,তাকে হারিয়ে যেতে দিন।
কেউ আপনার জীবনে থাকতে চায় তাকে আগলে রাখুন।
তবে এটা খেয়াল রাখা জরুরী আপনি কার সাথে থাকছেন।
যে আপনাকে পেয়ে গর্ববোধ করে,আপনাকে তার জীবনের অন্যতম পাওয়া ভাবে তার সাথেই থাকুন।
তার বিশ্বাস ভাঙবেন না।
আমরা কেউ শুদ্ধ না।
ভুল করতেই পারি কিন্ত বিশ্বাস ভেঙে ফেললে তা পুনরায় আগের জায়গায় আসেনা।
জীবনকে আমরা বাগান বানাতে চাই।
সেই জন্যই আমাদের জীবনের বাগানে নানা মানুষ যখন তখন ঢুকে পড়ে পরে কষ্ট দিয়ে যায় ফুল ছিঁড়ে নেওয়ার মত।
অথচ মানুষ ইচ্ছা করলে জীবনকে আকাশের মত বিশাল করতে পারে যা ছুঁতে চাইবে মানুষ কিন্ত যখন তখন ঢুকতে পারবে না।
হতাশ হবেন না।।
হতাশাবাদীদের স্থান দুনিয়ায় গ্রহণযোগ্য নয়।
সবকিছুতে সুন্দর দেখুন।
মানুষকে জাজ করা ছেড়ে দিন।
অকৃত্রিম ভালবাসুন। প্রত্যাশা কমিয়ে আনুন।
অন্যকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে নিজের জীবন ও কাজে মগ্ন হউন।
দেখবেন পরম প্রশান্তি জীবনে।
অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভার সৌন্দর্য দেখে ভেবে নিন শেষটাও সুন্দর হতে পারে।
আপনিও ফুরিয়ে যাননি।
শুধু শুধু দুঃখবিলাস করে লাভ নেই।
নিজেকে ভালবাসুন।
নিজেকে মূল্য দিন।
দেখবেন জীবন সুন্দর ও সুখকর হয়ে উঠেছে।
সময় জার্নাল/ইএইচ