সময় জার্নাল ডেস্ক : নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। আর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে দুই দেশের অনেক কাজ করার আছে। শুধু আকাশপথ নয় বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথেও গতিশীল যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দুদেশকে একসঙ্গে তথ্যবিনিময় করতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ১০ দিনের আয়োজনের ষষ্ঠ দিন গতকাল সোমবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নেপালের প্রেসিডেন্ট। ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
গতকালের আয়োজনের থিম ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যা দেবী ভান্ডারী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। বর্তমান বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ, একা চলার কথা চিন্তাও করা যায় না। আমরা সম্মিলিতভাবে চিন্তা করব। দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে, আর আছে জনগণ। আমরা সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাই, অবশ্যই আমরা এ অঞ্চলের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা নেপাল সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশালসংখ্যক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো অর্ধাহারে বা না খেয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যায়। অনেকে জীবনধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সে সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এ অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখব।’
জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করি যা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন- ভূমিকম্প, ক্লাউড ব্রাস্ট, বরফধস, ভূমিধস, ফ্লাস ফ্লাড বা হরকা বান ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মতো সাগর-উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো বারবার বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মতো দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের এ উপমহাদেশের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি নাজুক করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের অবদান না থাকলেও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা অভিযোজনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারি কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে।’ ওই সময় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে নেপাল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা নেপালের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ২০১২ এবং ২০১৩ সালে নেপালের ১১ জন নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননায় ভূষিত করি। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় নেপালের রাষ্ট্রপতিকে কৃতজ্ঞতাও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, তার উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা নিজেরা সম্মানিত হয়েছি।’ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর পাঠ করা হয় ধর্মগ্রন্থ থেকে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনা চলে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মাঝে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানটি টেলিভিশন, বেতার, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আজ অনুষ্ঠানমালার ৭ম দিন। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান টেলিভিশন, বেতার, অনলাইন ও স্যোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী প্রথম পর্বে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বিরতি এবং দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনা করবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, আলোচনায় অংশ নেবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভার ভিডিওবার্তা প্রচার করা হবে।
সময় জার্নাল/ইম