জানালার ওপাশে
তোমার জানালা খুলে দাও,
সবকটা কপাট উন্মুক্ত করে দাও, উদভ্রান্তের মতো,
যেমন খুলে যায় চোখের পাতা, গোলাপের কুঁড়ি,
আগ্নেয়গিরির মুখ।
তুমি তো লজ্জাবতী’র লতা নও,
গুটিয়ে থাকা যার স্বভাব।
একবার হয়ে যাও চৈত্রের নীলাকাশ,
ঝাঁঝালো রৌদ্রের মতো জ্বালাময়ী।
তোমার খোলা জানালায় ঢুকে যাক,
একঝাঁক প্রজাপতি, পতঙ্গ, উড়ো ধুলো,
সাগরের নোনা হাওয়া, দমকার মতো।
ঢুকে যাক উত্তুরে বরফেরা, হু হু ঠান্ডায় জমিয়ে দিক,
তোমার খাট,বিছানা, পড়ার টেবিল।
আকাশ হতে ছুটে আসুক উল্কাপিণ্ড,
তোমার জানালার গরাদের ফাঁক গলে ঢুকে যাক,
শিরা-উপশিরা হয়ে, হৃদপিণ্ডকে ছুঁয়ে, মস্তিষ্কে।
একবার হয়ে যাও উল্কামানব।
একটা ঝঞ্জাট হয়ে যাক ভীষণ উল্লাসে,
তোমার শোবার ঘর জুড়ে।
তোমার জানালা খুলে দাও,
হয়তো সুবহে সাদিকের পেলবতা এসে,
পরশ বুলিয়ে যাবে,
গরাদের ফাঁক গলে উড়েও আসতে পারে,
নীল খামে ভরা কোনো রঙিন চিঠি।
হয়তো কেউ পাঠিয়েছিল,
ফিরদাউসের কোনো সবুজ বাগান থেকে।
তোমার জানালা খুলে দাও,
রঙিন চিঠিটাকে আসতে দাও নিমন্ত্রণ নিয়ে।
সে যে সহস্র শতাব্দীর অপেক্ষায় আছে।
জানালার পাশ দিয়ে বয়ে যায় রক্তের নদী,
তোমার একটা ফোঁটা মেশাতে পারতে যদি,
সেই স্রোতে, সেই রঙে, সে ধারায়,
নদীর দুকূল জুড়ে গোলাপ ফুটে উঠতো,
গান গেয়ে উঠতো সুলায়মানের হুদ,
নদীটাই হয়ে যেতো রক্ত গোলাপ।
জানালার ঐ পাশে ওহুদের প্রান্তর,
একবার যদি তুমি গিরিখাতে দাঁড়াতে,
কোনো ভয়, প্রলোভন পারতো না টলাতে,
ইতিহাস হয়ে যেতো অন্যরকম।
তোমার জানালা খুলে দাও,
সূর্যকে দেখতে দাও তোমার পড়ার টেবিল।
এতকাল সংকোচে লুকিয়েছ নিজেকে,
এবার ভাঙুক বাঁধ, দ্বিধা, ভয়, সংশয়,
সাহসের দারুণ স্পর্ধায়।
এবার দাঁড়াও তুমি সূর্যের মুখোমুখি মাথা উঁচু করে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৩ ডিসেম্বর ২০২১।