শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

বাংলাদেশে একটি জনবান্ধব সমাজ ও অর্থনীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা: পর্ব-২

শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
বাংলাদেশে একটি জনবান্ধব সমাজ ও অর্থনীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা: পর্ব-২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সুযোগ এসেছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সকল মানুষ জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন দেশ গড়া, দেশকে এগিয়ে নেয়ার।

সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করলেও নানামুখী চাপে অনেক উদ্যোগই আশানুরূপ আগায়নি। বেকারত্ব, লিঙ্গ বৈষম্য, স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততা, শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করা এবং জনস্বার্থে সম্পদ পুনঃবণ্টনের মাধ্যমে গভীর সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি সুস্পষ্ট কর্ম পরিকল্পনা করে আগালে এক অদম্য বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। 

আর এই দেশ গড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন জিওপলিটিক্যাল ইকোনমিস্ট অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। 'বাংলাদেশে একটি জনবান্ধব সমাজ ও অর্থনীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা' বইতে অধ্যাপক পারভেজ তথ্য নির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। নার্সিং ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা সুরক্ষা নিশ্চিত ও ন্যায় বিচারের প্রসারে কথা বলেছেন তিনি।

আজকের লেখায় অধ্যাপক পারভেজের রুপরেখার দ্বিতীয় পর্ব-

নার্সিং ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণ জোরদার করণ 
বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত নার্সের সংকট স্বাস্থ্যসেবার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নার্সের সংখ্যা প্রায় ১,৬৮,৬৩০জন। নার্স-চিকিৎসক অনুপাত ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ১.৬:১, যা ২০১৩সালের ০.৪:১অনুপাত থেকে উন্নতি হলেও এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ডঐঙ) সুপারিশকৃত ৩:১ মানদণ্ডের অনেক নিচে। শহরাঞ্চলের হাসপাতালে তুলনামূলক ভালো অবস্থা দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে মারাত্মক নার্স সংকট রয়েছে, যেখানে অনভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই দীর্ঘ স্থায়ী ঘাটতি স্বাস্থ্যসেবার মান ক্ষুণ্ণ করে, নার্সদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং স্বাস্থ্যকর্মী বিতরণ ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্যকে প্রতিফলিত করে।

এই সমস্যার সমাধানে, প্রস্তাবনাগুলো নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণের আহŸান জানায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৬১টি নার্সিং ইন্সটিটিউট (সরকারি-৭০, স্বায়ত্তশাসিত-৮, বেসরকারি-৩৮৩টি) রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট ও স্বল্প আসন সংখ্যার কারণে অনেক আসন খালি থাকে, এবং বর্তমান নার্স উৎপাদন প্রয়োজনের মাত্র - ২৪% মেটাতে সক্ষম। নতুন নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন ও ভর্তি সংখ্যা বাড়িয়ে এই নীতিমালা স্বাস্থ্য খাতে প্রশিক্ষিত কর্মী বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, ২০২২ সালে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৫% নারী ছিল (২১,৮৮১ জন)। এ কারণে নার্সিং ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো অপরিহার্য। নার্সিং কলেজে বিনিয়োগ এবং নার্সিং পেশার জন্য প্রণোদনা বাড়ানো হলে স্বাস্থ্যখাতের কর্মী বাহিনী শক্তিশালী হবে যা তথ্যের ভিত্তিতে বর্তমান ঘাটতির সরাসরি প্রতিক্রিয়া। 

খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করণ
 বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, যা দূষিত বা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে ঘটে।বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক বছরে ৮,৩৯১টি খাদ্য নমুনার মধ্যে ৭৪৫টি পণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে (৯%)। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত, বিএফএস এ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫,৭৪৩টি অভিযান পরিচালনা করে ১০,০০০এরও বেশি অপরাধীকে দÐিত করেছে এবং ৮৮লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তবায়ন এখনো দুর্বল এবং বিএফএস এ পর্যাপ্ত জনবল সংকটে ভুগছে। প্রস্তাবনাগুলো এই সমস্যা সমাধানে বিএফএসএ-র সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে যেমন অধিকতর পরিদর্শক নিয়োগ, পরীক্ষাগার উন্নয়ন, এবং কঠোর শাস্তি প্রবর্তন। এছাড়া আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয় এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

ন্যায় বিচারের প্রসার
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশে বিচার প্রাপ্তি প্রায়ই দেরি হয় এবং রাজধানী কেন্দ্রীভ‚ত, যা বিচার বিভাগে বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে মোট ৪.৫১মিলিয়ন মামলা বিচারাধীন ছিল, যা আগের বছরের ৪.২৯মিলিয়ন থেকে বেড়েছে। নিম্ন আদালতেই প্রায় ৩.৯মিলিয়ন মামলা পরিচালিত হয়। দেশজুড়ে মাত্র ২,০০০ সক্রিয় বিচারক রয়েছেন, অর্থাৎ গড়ে প্রতি ৮৫,০০০জনের জন্য মাত্র ১জন বিচারক। উচ্চ আদালতের সব বেঞ্চ ঢাকা শহরে কেন্দ্রীভ‚ত, ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চ আদালতের সেবা নিতে হলে ঢাকায় আসতে হয়। এই অবস্থার পরিবর্তনে, সংস্কার কমিশন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করেছে, সাথে জেলা/উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর মতো অঞ্চলের মানুষ ঢাকায় না গিয়েই স্থানীয় হাইকোর্টবেঞ্চ থেকে আপিল করতে পারবে। বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, নতুন বিচারক নিয়োগ এবং নতুন আদালত স্থাপনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়বে। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে জাতীয় আইনি সহায়তা কর্মসূচি (ঘধঃরড়হধষ খবমধষ অরফ) ও মধ্যস্থতা সেবা সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি দ্রুত, সুলভ ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করবে যা তথ্য-ভিত্তিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল