লাবিন রহমান: বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানের কথা একটু আলাদা করে বলতে চাই। বন্দুক হাতে রণাঙ্গণে পুরুষ যোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন এমন নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
এদের মধ্যে স্বীকৃতস্বরূপ বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন তিন নারী। এরা হলেন—ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম, তারামন বিবি ও কাঁকন বিবি। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অসীম অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।
১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্ম সিতারা বেগমের। বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল এবং মা হাকিমুন নেসা। তবে বৈবাহিক সূত্রে তিনি সিতারা রহমান নামে পরিচিত। স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সিতারা। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের ভেতর তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার বাবা মোঃ ইসরাইল মিয়া পেশায় ছিলেন আইনজীবী।
যুদ্ধে সময় তার বড় ভাই এটিএম হায়দারও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তার সাথে কিশোরগঞ্জে শৈশব কাটান সিতারা বেগম। সেখান থেকে মেট্রিক পাশ করার পর হলিক্রস কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেনামেডিকেলে লেফটেন্যান্ট হিসাবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিতারা ও তার ভাই হায়দার ঈদের ছুটি পালন করার জন্য তাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে যান। কিন্তু সেই সময়ে দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।হায়দার তার বোনকে ক্যান্টনমেন্টে আর ফিরে না যাবার জন্য বলেন। পরবর্তীতে তিনি তার বোন সিতারা, বাবা-মা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাঠান। কিশোরগঞ্জ থেকে মেঘালয়ে পৌছাতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মেলাঘরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল নামে ৪৮০ শয্যার একটি হাসপাতাল ছিলো। ঢাকা মেডিকেলের শেষ বর্ষের অনেক ছাত্র সেখানে ছিলো। ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা সেক্টর-২ এর অধীনে সেখানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। হাসপাতালে একটি অপারেশন থিয়েটার ছিলো। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাঙালি ছাড়াও সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লোকজন চিকিৎসাসেবা নিত।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা ধরে দিনের পর দিন এ হাসপাতালে ডাক্তার সিতারার কাজ ছিল অসাধ্য সাধন করে যাওয়া। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা গুলিবিদ্ধ, স্প্লিন্টারের আঘাতে ঝাঁঝরা, গুরুতর জখম মুক্তিযোদ্ধাদের সারিয়ে তুলতে হতো খুব সামান্য আর সাধারণ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে। সিতারা বেগমকে কেবল ওষুধ সংগ্রহের জন্য নিয়মিত আগরতলা যেতে হতো। তার রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিপুণ পরিচালনার ফলে বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধরত ভারতীয় সেনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেডিওতে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সংবাদ শুনে ঢাকা চলে আসেন ডা: সিতারা। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে তার ভাই মেজর হায়দার নিহত হলে ডা: সিতারা ও তার পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করেন।
জাতি আজও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে তাদের বীরত্ব গাঁথা।
তথ্য: ইন্টারনেট
সময় জার্নাল/এলআর