আব্দুল্লাহ চৌধুরী, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি, আপনাদের কাছে ভোট দাবি করতেছি, আপনারা আগামী ২৬ তারিখে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। কোন কেন্দ্র উনি নিজের হাতে নিয়ে যাবে, এগুলো খামাকা (ভূয়া) কথা। ‘কেন্দ্র দখল করলে আমরা করবো, জোর করে ভোট নিলে আমরা নিবো, কারণ আমরা সরকারের প্রতিনিধি! ইনশাআল্লাহ’।
গতকাল রোববার রাতে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহুর্ত্বের মধ্যে ভাইরাল হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনকালে নোয়াখালীর সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার এমন বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর দাদপুরের ভোটারদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ৭ডিসেম্বর অন্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৪ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দাদপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বারাহীপুর এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু। সেখানে তিনি নিজের নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
একই অনুষ্ঠানে নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলুর কর্মী ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে দিবো। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করলে তাদের তালিকা আমরা কড়া-গন্ডায় গনবো এবং প্রশাসন তাদেরকে ধরার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
ভোটাররা বলছেন, জেলায় সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনগুলো প্রশাসনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু দাদপুরে ভোটের আগেই কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ভোট নেওয়ার ঘোষণায় বুঝা যাচ্ছে এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হবে। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলেন ভোটাররা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাদপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেলু এমন বক্তব্য দিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, আমি অন্য সূত্র ধরে এ কথা বলেছি। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এটি আমার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মিজানুর রহমান শিপনের কাজ। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানান।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মিজানুর রহমান শিপন বলেন, তিনি নিজ মুখে কেন্দ্র দখলের কথা বলেছেন, যার ভিডিও ইতোমধ্যে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি কেন উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করবো। শুধু এই ভিডিও নয়, নৌকার প্রার্থী ইতিমধ্যে তার সব নির্বাচনী পথসভা, শোডাউন, উঠোন বৈঠকে ভোটের দিন জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ভোট ছিনিয়ে নেওয়া ও ভোটের আগে আমার কর্মীদের এলাকা ছাড়া করার ঘোষণা দিয়ে আসছেন।
শিপন বলেন, চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি (দেলোয়ার হোসেন দেলু) অনেক অনিয়ম করেছেন। এখন আবার ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করাসহ আমার লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। আমি এসব বিষয়ে থানায় জিডি করে রেখেছি।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জুলকার নাঈম বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে এমন ঘোষণা দেন, তাহলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রির্টানিং কর্মকর্তা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
সময় জার্নাল/এলআর