সময় জার্নাল প্রতিবেদক : পদত্যাগ করা সমালোচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্তের জন্য পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ‘বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে একটি জিডি দায়ের করা হয় মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে। আজ বুধবার ওই জিডি সাইবার ক্রাইম বিভাগে পাঠানো হবে।
মওদুদ হাওলাদার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী একটি অভিযোগ নিয়ে আসেন। আমরা সেটিকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিয়েছি। এখন এটি সাইবার ক্রাইম বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো এটি মামলা হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদার এই অভিযোগটি দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ‘নাহিদ রেইনস পিকচার্স’ নামে একটি ফেসবুক পেজে লাইভ অনুষ্ঠানে এসে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যকে ‘বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিজার তালুকদার।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মুরাদ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে দেশের সর্বপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন।
কয়েকদিন আগে একটি ভিডিওতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ দলের ছাত্রী নেত্রীদের বিরুদ্ধে অশালীন এবং অবমাননাকর বক্তব্য দিতে দেখা যায় পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।
এর মধ্যে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এবং চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে একটি টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার রাতেই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন বলে খবরে জানা গেছে।
বিরোধীদল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে মুরাদের নারী বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে প্রবল সমালোচনার মাঝেই একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপের সঙ্গে তার নাম যুক্ত হয়। এই দুটি ঘটনাই আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। এ নিয়ে মুরাদ হাসান রোববার রাতে বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন না এবং তিনি কোনো ভুল করেননি।
কিন্তু একটি ইউটিউব ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন চিত্রনায়িকাকে অশোভন কথাবার্তা ও হুমকি দিতে শোনা গেছে এক ব্যক্তিকে।
অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর একটি ফেসবুক বার্তায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি জানান, দুই বছর আগের ওই টেলিফোন আলাপে তার সঙ্গেই প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের কথা হয়েছিল। এই বিষয়ে মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, পর পর দুটি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন, নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন সমালোচনার ঝড় ওঠে, তেমন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়।
ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় সোমবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলেন। পরদিন মঙ্গলবার ই-মেইলযোগে একটি পদত্যাগপত্র পাঠান মুরাদ হাসান। একই সঙ্গে বেলা ২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি ‘ক্ষমা’ চান।
এদিকে, মুরাদ হাসান যে এলাকার এমপি, সেই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে তার সাংগঠনিক পদ থেকে বরখাস্ত করে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে। নানা অঙ্গণ থেকে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিডি হলো শাহবাগ থানায়। যে টেলিফোন আলাপটি নিয়ে এত আলোচনা সেই ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমনকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মঙ্গলবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এসএ