ক্রমশ বা অকস্মাৎ
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
আমাদের আয়ু খুব অল্প, পৃথিবীর বয়সের মতো,
আদমের হাত ধরে শুরু হয়েছিল চলা,
আদমের সন্তানে শেষ।
পৃথিবীর মতোই আমরা ছুটে চলেছি,
রহস্যময় মৃত্যুর রাজকীয় দ্বারে
ক্রমশ বা অকস্মাৎ,
আমাদের বিশ্রাম সেখানেই।
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
যতই চিন্তা করি চেতনায় তোলপাড়,
কবরের শীতলতা শিহরিত করে,
বুকের গ্রন্থিগুলি অজান্তে কেঁপে ওঠে,
অবশ্যম্ভাবী পরিনতির অনিশ্চিত সফরে।
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
তাই হয়তো পৃথিবী বিছিয়ে দেয় রঙিন পালক
আর গেয়ে ওঠে চীর অতৃপ্তির গান।
আমাদের অন্তর উন্মত্ত হয়ে ওঠে,
চুলে গুঁজে নেয় সেই রঙিন পালক।
সে পাখি হতে চায়।
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
এ বিশ্বাস আমাদের দুর্বিনীত করে তোলে।
বিবেকের ভ্রুকুটিকে হেলায় তুচ্ছ করে,
পুরস্কার বা তিরস্কারের প্রাপ্তিকে,
অস্বীকার করতে থাকে অবাধ্য কন্ঠ।
আয়ুর স্বল্পতাকে পুষিয়ে নিতেই,
আত্মমগ্নতায় ডুবে থাকে মন,
শান্তি খুঁজতে থাকে পৃথিবীতে।
এ যেন পূর্ব নির্ধারিত যাত্রাকে ভুলে থাকার ব্যার্থ প্রচেষ্টা।
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
নিশ্চিত সত্যকে বিশ্বাস করি বলেই,
কখনো হয়তো আমরা সত্য হয়ে উঠি।
সংগঠিত করে তুলি মানুষ নামের অসংখ্য মানুষকে।
সত্যের আবহে বাঁচি বলেই,
মিছিলের প্রথম পতাকা তুলে নিই আমাদের হাতে।
অপবাদ, নির্যাতন অথবা বন্দুকের গুলিকে,
আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি।
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে,
স্বল্প আয়ুর সীমা যদি ভাঙে অকস্মাৎ,
লালসার সুক্ষ্ম জাল ছিঁড়ে ফেলে,
আমরা মহান হতে চাই।
পৃথিবীর অন্তরে পুঁতে দিয়ে যেতে চাই সত্যের বীজ।
কখনো কখনো আমরা মানুষ হয়ে উঠি,
কারণ —
আমরা জানি, আমাদের যেতে হবে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৭ ডিসেম্বর ২০২১।