ঘরোয়া কাসুন্দি
মাঝে মাঝে সাধ জাগে ঘরোয়া হবো,
আজ কিছু ভাববো না, গার্হস্থ্য ছাড়া।
আয়েশ করে দুটো রাঁধব মাছে-ভাতে,
জনা কয়েক পড়শীকে ডেকে নিয়ে,
আমের কাশ্মীরি আচারের রেসিপির গল্পে,
মধ্যাহ্ন ভোজনটা সেরে নেবো ঝালে-ঝোলে।
শখের পান চিবোতে চিবোতে উল্টো দিকের বাড়ির,
চৌধুরী গিন্নীর হাঁড়ির খবর জেনে নেবো সুকৌশলে।
কোন বাড়ির স্কুল পড়ুয়া মেয়ের
দশ পাঁচটা ছেলে বন্ধু জুটেছে
আর কার ছেলে মা-বাবার ভিষণ অবাধ্য,
এই সুগভীর তথ্যগুলো ততক্ষণে আমার জানা হয়ে যাবে।
তারপর, পড়শীদের বিদায় দিয়ে,
দুপুরের ভাতঘুমটা সেরে নেবো খোকাকে কোলে নিয়ে,
না হয় অনিচ্ছায় ঘুম পাড়ানি গানটাও,
গেয়ে শোনাবো খোকার কানে।
মাঝে মাঝে সাধ জাগে, ঘরোয়া হবো,
বিকেলটা কাটিয়ে দেবো পাড়া বেড়িয়ে।
পড়শীর কার গায়ে নতুন গয়না হলো,
ক'টাকার শাড়ি,
বাপদের ঘর থেকে কার বউ নিয়ে এলো,
টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি,
অংকের হিসেবটা জানা হয়ে যাবে।
কার ঘরে কর্তার ক'টাকা বেতন,
তার ওপরে উপরিটা কতো করে আসে,
কার কর্তার কতো ক্ষমতার দম,
কয়টা ফাইল রোজ আটকাতে পারে,
এসব আমি জেনে নেবো এক বিকেলেই,
পাড়া বেড়াবার যদি ফুরসত পাই।
এসব তথ্য জানা খুব প্রয়োজন,
এরই সাথে মিশে থাকে স্যালুটের ধরন।
মাঝে মাঝে সাধ জাগে, ঘরোয়া হবো,
একটা আস্ত দিন কাটিয়ে দেবো দারুণ আড়ম্বরে,
চৌদ্দ জনের চৌদ্দখানা খবরে,
পরিপূর্ণ করে নেবো আমার পরচর্চার ঝোলাখানি।
অথচ—
ঘরের বাইরে রোজ এতো কিছু ঘটে যায়,
প্রতিদিন নিত্য নতুন সংবাদ,
জনতার সমুদ্রে নিত্য নতুন ঘটনা,
আমাকে অস্থির করে, বিমর্ষ করে, উৎফুল্ল করে।
আমার খুব সাধ জাগে, ঘরোয়া হওয়ার
কিন্তু বাহির আমাকে আর ঘরোয়া হতে দেয় না।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৮ ডিসেম্বর ২০২১