চেনা চেনা সুখ
তোমরা যেখানে খুশি চলে যেতে পারো,
আমি এখানেই রবো আমৃত্যু।
একটা ছোট্ট পাড়ার মাঝে,
ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকা
বাড়িগুলোর অন্তরালে।
এখানে আনন্দের কোনো সীমা নেই,
এখানে দুঃখেরও অবারিত আসা- যাওয়া।
নিত্য কুটুম আসে কুটুম পাখির মতো,
কষ্টে জোটানো দুটো ডিমভাতে আপ্যায়িত হয়।
কালে-ভদ্রে যদি জুটে যায় একমুঠো গুড়-মুড়ি, চালের গুঁড়ো,
ঘটে যায় মহোৎসব!
পাড়ার বউ-ঝিয়েরা বসে যায় উনুনের পাশে,
শুরু হয় পিঠা নিয়ে গুনের চর্চা।
সবাই এখানে এসে ভাগ করে খায়,
একমুঠো বাতাসা বা খইয়ের মোয়া।
কে যে কার মা-জননী, কে যে কার শিশু,
অচেনা পথিক এলে পড়বে দ্বিধায়,
সব ঘরে খাওয়া চলে, সব ঘরে নাওয়া,
শিশুরা এই পাড়ার সার্বজনীন।
হঠাৎ কখনও যদি জ্বর আসে গায়ে,
দেখবে মাথার কাছে উৎকন্ঠিত
জনাদশেক মুখ মায়ের মতো,
অসুখ ভাঙবে মন সাধ্য কি তার!
ছোট্ট এ পাড়াটাতে গর্বের মতো
আর কিছু নেই শুধু মসজিদ ছাড়া।
পাড়ার পুরুষ যত সন্ধ্যায় ফিরে
মসজিদ চত্বরে জমায়েত হয়।
আমার জানালা থেকে মিনারটা দেখি,
উড়ে এসে জুড়ে বসে চড়ুইয়ের ঝাঁক,
মেঠো পথ ধরে কোনো পথিক এলে,
দূর থেকে চিনে নেয় মিনারটা দেখে।
পাঁচবেলা কানে আসে আযানের সুর,
পাড়ার সবার চেনা মুয়াজ্জিনের,
সুমধুর চেনা সুর অন্তরে বাজে,
আর কোনো সুর এতো লাগেনা আপন।
মুয়াজ্জিন চাচা থামবে কোথায়,
কোথায় গলাটা তার নামবে খাদে,
কোথায় আবার হবে উচ্চকিত,
এপাড়ার ছেলে- বুড়ো সবার জানা।
চেনা মুখ, চেনা সুর, চেনা চেনা সুখ,
এসব পেছনে ফেলে কোথায় যাবো?
তোমরা যেখানে খুশি চলে যেতে পারো,
আমি এখানেই রবো আমৃত্যু।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৯ ডিসেম্বর ২০২১।