রঙধনুটার কাছে
তাঁরা চলে গেছে বলে তাঁদের খুঁজবো না,
তা কি হয়?
তাঁরা জঞ্জালের ভেতর দিয়ে চলে গেছে,
রাস্তার সমস্ত কাঁটা শজারুর চামড়ার মতো
দুপায়ে ধারণ করে নিয়ে গেছে।
রাস্তার পাশে ছিলো ফনিমনসার কাঁটা, বাবলার ঝোপ,
পথের ওপারে ছিলো রঙধনু,
তার রঙের সিঁড়িতে দাঁড়ালেই নাকি
জান্নাত পাওয়া যায়।
গল্পটা ছিলো সবার মুখে মুখে,
সুপ্রাচীন প্রবাদের মতো,
পরম বিশ্বাসে, বুকে বুকে।
কতজন চেয়েছিলো রঙধনু ছুঁতে,
পথের ওপারে যেতে,
জান্নাতে যাবার লোভ কার না থাকে।
তবু ফনিমনসার কাঁটা, বাবলার ঝোপ,
সে ভারি অসহ্য, দুর্গমও।
চিরকালের নিশ্চিন্ত সংসার ফেলে,
ও পথ পেরোনোর সাহস কারও হয়নি কখনো।
যদিও কারও মনে পথের জটিলতাটুকু
অতিক্রম করার স্পর্ধা জেগেছে,
তবু বিষাক্ত কাঁটার তীব্র আঘাতে,
রক্তাক্ত পায়ে ফিরে এসেছে সংসারের আবর্তে,
কেউবা বসে পড়েছে মাঝপথে, থেমে গেছে।
বহুবছর ধরে আমরা এই চেষ্টাটায় দেখে গেছি,
শ্বাপদসংকুল, কাঁটাযুক্ত পথ ধরে এগিয়ে,
জান্নাতের সিঁড়ি ধরার চেষ্টা।
আমরা দেখেছি আর অপেক্ষা করেছি একজন বিজয়ীর।
অতঃপর —
তাঁরা হাতে গোনা মাত্র ক'জনা,
সবার সামনে দিয়ে চলে গেলো।
ফনিমনসার কাঁটা, বাবলার ঝোপের পাশ দিয়ে,
তাঁরা হেঁটে গেলো, কি ভাবলেশহীন মুখ,
যেন ফুল বিছানো পথে চলেছে,
তাঁদের চোখ, মুখ কিংবা গ্রীবা
একটুও সংকুচিত হয়নি।
তাঁরা হেঁটে গেলো
আর কেটে গেলো জনতার আজন্ম ভয়।
পথের সকল কাঁটা দুপায়ে
বিদ্ধ করে নিয়ে গেলো
আর দিয়ে গেলো পরিচ্ছন্ন রাজপথ,
অনাগত পথিকের।
তাঁদের পায়ের চিহ্ন হয়ে ফোটা ফোটা রক্ত,
পড়ে আছে সারা পথ জুড়ে।
সেই পায়ের চিহ্ন ধরে তাঁদের খুঁজবো না,
তা কি হয়?
আমরাও একদিন পোঁছাবো,
ঐ রঙধনুটার কাছে,
ওপারে যাবার সিঁড়িতে,
যেখানে রয়েছে চিরবসন্ত উদ্যানে,
দুঃসাহসী বিজয়ীরা।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১০ ডিসেম্বর ২০২১।