পরাভূত বিশালদেহী
একটা ছোট্ট অশ্বত্থের চারা,
মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলে দাঁড়ালো,
সূর্যের দিকে চেয়ে সে কি তার উচ্ছ্বাস!
বড়ো হবার তীব্র আকাঙ্খায় আত্মহারা।
চারপাশের দূর্বা-সইদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই,
নিজের খুশিতে সে নিজেই মাতাল।
শক্তির তীব্রতা, বৃদ্ধির গভীরতা
তাকে উদ্বেলিত করে তুললো,
সে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো
আর নীচে পড়ে রইলো দূর্বার ঝাঁক,
যাদের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কেটেছিলো জন্মকাল।
ছোট্ট অশ্বত্থের চারা ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো
মস্ত এক মহীরুহ।
তার ঝাকড়া সবুজ চুলগুলো
তখন পতপত করে উড়ছে,
সবুজ রঙা পতাকার মতো।
বহুদূর মাঠের ওপার থেকে সেই সবুজ পতাকা দেখে,
অনায়াসে চেনা যায় অশ্বত্থের রাজকীয় আবাস।
কি রাজকীয় আর দাম্ভিক তার উপস্থিতি!
মোসাহেবি হাওয়ারা সারাদিন, সারারাত
তার চারপাশ ঘিরে গুণ গুণ করে।
কখনো প্রবল হয়ে বৈশাখী ঝড়,
ঘূর্ণি বেগে তাকে অস্থির করে।
ছোট-খাটো ডালপালা, এক রাশি পাতা,
হয়তো কখনো তাতে ভেঙে চুরে পড়ে,
তবু্ও অশ্বত্থের জাদরেল দেহ
একটু টলাবে তার সাধ্য কি আছে?
সবুজ চুলের ফাঁকে বাসা বেঁধে থাকে,
একঝাঁক বুনো হাঁস, বন-কবুতর।
সবুজ ছায়ার নীচে দম নিতে বসে,
দূরের পথিক কি'বা শ্রান্ত চাষা।
কতজনা তার দান হাত পেতে নেয়,
কতজনা তার দেহে ঠাঁই খুঁজে পায়।
সবই যেন ইতিহাস, সত্যের মতো,
অশ্বত্থ দিনে দিনে উদ্ধত হয়।
ভেবে নেয় তাকে ছাড়া পৃথিবী অচল,
ভেবে নেয় অমর সে চীর অবিচল।
হঠাৎ এক বৈশাখী নিশুতি রাতে,
তীব্র ঘূর্ণিপাকে জাগে লোকালয়,
সারারাত কেটে যায় ঝড়ের প্রকোপ।
সকালে শান্ত হলে ছুটে যায় লোকে,
চেয়ে দেখে পরাভূত বিশালদেহী,
আছড়ে ছিটকে যেন বংশ বিলোপ।
দূর্বা সইরা সেই শৈশব সাথী,
যাদের সে ভুলেছিলো তাচ্ছিল্যতে,
একটা রাতের ঝড়ে ক্ষমতার আকর,
তাদের ওপরই হলো জীবন অবসান।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১২ ডিসেম্বর ২০২১।