বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী আজ

বুধবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী আজ

সময় জার্নাল : ‘...পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে/জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/এই বাংলায়/তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’

কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা একাত্তর সালের এই দিনে সত্যি হয়েছিল বাঙালি জাতির জীবনে। ৫০ বছর আগে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই ১৬ ডিসেম্বরে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে উদিত হয়েছিল নতুন এক সূর্য। সে সূর্য কিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রং। সেই রক্তের রং সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল বাংলার লাল সবুজ পতাকা। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ই মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে জাতিকে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল বাঙালি জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। প্রায় ৯ মাস বিভীষিকাময় সময়ের পরিসমাপ্তির দিন। লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্রোত, স্বামী-সন্তানহারা নারীর অশ্রুধারা, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা আর বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল মহান এই বিজয়। ৫০ বছর আগে এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৪টায় এবং শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য রাখবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথিকে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা স্মারক প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের বীর সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব প্রান্তে মানুষ অংশ নিচ্ছে বিজয় দিবসে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮টায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টি-জেপির কর্মসূচি

জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দেশবাসী জনগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা শ্রদ্ধা জানান ৩০ লাখ শহিদ ও নির্যাতিত মা বোনদের, যারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নেতৃদ্বয় স্মরণ করেন বিজয়ের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতাকে।

জেপির নেতৃদ্বয় বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু এখনো এ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, মানুষে-মানুষে বৈষম্য দূরীকরণ এবং সাম্য ও মানবিক মূলবোধ প্রতিষ্ঠা করতে অনেক দূর যেতে হবে। এবারের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি উন্নত গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যেতে পারি।

মহান বিজয় দিবসে আজ সকাল ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেপির সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল