বুধবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
যদি আর একবার ঘুরে দাঁড়াই
আমরা ভিষণ সংগঠিত অথচ আমরা একা,
আমরা অসংখ্য, অগণিত,
হাজার, লক্ষের ঘর পেরিয়ে নিযুত, কোটি ছাড়িয়ে এসেছি বহু পূর্বেই।
আমরা অগণিত,
তাই হাত-পা ছড়িয়ে বসার জায়গাটুকু নেই।
বড়ো গাদাগাদি করে, গুচ্ছের মতো বাঁচি।
আমরা অজস্র মাছির মতো ভনভন করতে থাকি,
একথালা সাদা ভাতের ওপর,
দুটো দেশলাই কাঠি আর একমুখ ধোঁয়ার প্রলোভনে,
যে কেউ আমাদের টেনে নিয়ে যেতে পারে
জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।
আপাদমস্তক ঋণের বোঝাই জর্জরিত
মহা খাতকের মতো,
আমাদের সর্বস্ব বাঁধা পড়ে আছে।
আমাদের বউ-ঝিয়েরা কড়া মেকাপের আস্তরণে,
নিজেদের কর্কশ চামড়া লুকিয়ে রাখে।
উৎকট প্রসাধনীর আড়ালে লুকিয়ে রাখে,
তাদের অসুখী, ক্ষুধার্থ কন্ঠার হাড়।
লাবন্য হারিয়ে গেছে,
হারিয়েছে সজীবতা দীর্ঘদিনের নিষ্পেষিত ধানক্ষেত থেকে।
এখন আর মাটির বুক উপচে উর্বরতা ঢেউ খেলেনা।
অথচ গত পঞ্চাশ বছর ধরে,
মুখস্ত পদ্যের মতো গেয়ে চলেছি,
আমরা যোদ্ধা জাতি।
আমরা সংখ্যায় যত বাড়ি,
আমাদের যোদ্ধা তত বাড়ে,
আমরা সংখ্যায় যত বাড়ি,
আমাদের শক্তি তত বাড়ে।
আমরা বাড়তে বাড়তে এক ঝাঁক পিপীলিকা হয়ে গেছি।
অথচ আমাদের হাড়অস্তিমজ্জায়,
একটা লটারি পাওয়ার লোভ জমে গেছে।
যা আমাদের করে তুলেছে উদাসীন আর অকর্মণ্য।
আমরা মায়ের কোলে শুয়েই বর্গী তাড়ানোর গল্প শুনেছি,
বখতিয়ারের রাজ্যজয়ী ঘোড়ার খুরের শব্দ পেয়েছি।
দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় সংগঠিত হয়েছি, উজ্জীবিত হয়েছি।
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায়,
ঈশা খাঁ’র লাঠিয়াল বাহিনীর সাথে,
বাহান্নর মিছিলের পতাকা ছিলো আমাদের হাতে,
একাত্তরের রণাঙ্গনে ছিলাম,
লাউয়ের ঝাঁকায় গ্রেনেড লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া ছোট্ট কিশোর।
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে
দারুণ দুঃসাহসে, দিগবিজয়ীর গল্পে।
আমরা সেদিন সংগঠিত ছিলাম একগুচ্ছ ফুলের মতো।
আর আজ—
অসংখ্য জনতার ভীড়ে,
কি ভিষণ নিঃসঙ্গ! কি ভিষণ একা!
তবু যদি আর একবার ঘুরে দাঁড়াই,
যদি সমস্ত ছেলেবেলাগুলোকে একত্রিত করি,
যদি সেই গল্পগুলোকে বুনে ফেলি
সাহসের আবেগি সুতোয়।
তবে বুঝি আবার চমকে যাবে পৃথিবী।
দেখবে এক নতুন জাতি,
বিক্ষুদ্ধ সাগরের মাঝে জেগে ওঠা সবুজ এক বদ্বীপ।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৫ ডিসেম্বর ২০২১।