আঁধারে আস্ফালন
প্রভাতের আলো চোখ মেলতেই পতঙ্গগুলো ছটফটায়,
রাজ্যের যত আদুড়-বাদুড়, চামচিকারা চমকে যায়।
সারারাত ধরে চলে দাপাদাপি, কি যে ঝাঁপাঝাপি অহেতুক,
ঝিঁঝিঁ চিৎকারে কান পাতা দায়, অকারণে গায় উজবুক।
রাতের আঁধার নেমে আসতেই জেগে ওঠে শত নিশাচর,
অন্ধকারের বন্ধ আগলে হাহাকারে ভরে চরাচর।
কতো বাদুড়ের ডানা ঝাপটানি, কতো চামচিকা নেচে যায়,
অন্ধজীবীর আস্ফালনে রাতগুলো ত্রাসে কাতরায়।
মলিন ছায়ার মহাঅধিপতি মলিনতা মাখা জীবনে,
নিজেকে ভাবে সে শক্তির আধার সন্ত্রাসে ভরা ভুবনে।
রাত নেমে আসে পর্দার মতো ঢেকে দেয় সব পাপাচার,
পর্দার আড়ালে উল্লাসে মাতে শতসহস্র কদাকার।
স্নেহ, ভালোবাসা, মানবিক যত দিনের আলোয় উদ্ভাসে,
অমানবিকতা প্রাণ ফিরে পায় গভীর রাতের উল্লাসে।
মোমবাতি জ্বালো, মশালের আলো কিংবা মাটির ছোট প্রদীপ,
একটুকু আলো জ্বলে উঠতেই চামচিকা মন টিপ টিপ।
ওরা ভালোবাসে গভীর আঁধার, অন্ধকারেই শান্তি,
আঁধারের মাঝে বাড়ে হিংস্রতা, আঁধারের মাঝে ভ্রান্তি।
আঁধার যেন মুখোশের মতো লুকিয়ে রাখতে সহজেই,
কদাকার যত কদর্য প্রাণ মুখোশটাকে খুঁজবেই।
কতো অপরাধী পার পেয়ে যায় অমাবস্যার মেলাতে,
অপরাধগুলো বাড়তেই থাকে নিদারুণ অবহেলাতে।
অপরাধী তাই আলোকে ডরায়, চায় না উঠুক সূর্য,
কখনো চায় না মহাসত্যের আলোকিত কোনো তূর্য।
এইতো সেদিন মরুর আঁধারে আলোকিত চাঁদ উঠলো,
সে আলোর ঘায়ে ভীরু চামচিকা ত্রাহি ত্রাহি রবে ছুটলো।
একজোট হলো বাদুড়ের ঝাঁক সে আলোকে মুছে ফেলতে,
জেগে ওঠা শত জনসমাবেশ আবার আঁধারে ঠেলতে।
কেউ ছিলো নবী মুসার বাহিনী গদগদ মুখে ভক্তি,
আলখাল্লায় আবৃত ছিলো অন্ধকারের শক্তি।
কেউবা নবী ইবরাহীমের বংশধরের দাবিদার,
অথচ নেতার আদেশ পালনে অবাধ্যতার কারিগর।
জানতো তাদের আকাশে উঠবে সত্যের মহাভাস্কর,
তারাইতো ছিলো সত্যকে মেনে এগিয়ে যাবার হকদার।
তবুও তারাই মুখটা ফিরিয়ে আঁধারেই পথ খুঁজলো,
ভোরের আলোয় বাদুড়ের মতো মহা ত্রাসে চোখ বুজলো।
বাদুড়ের শত উত্তরসূরী আলো জ্বললেই ছটফট,
সত্যের ডাক শুনতে পেলেই আজও হয় তারা একজোট।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৪ ডিসেম্বর ২০২১।