স্বপ্ন ভাঙার শব্দ
আমি তাকে দেখলাম,
আমি তাকেই দেখলাম।
মহামান্য আদালতের মস্ত দালানের বাইরে,
একটা পুরনো জামগাছের শেকড়ের ওপর বসে আছে।
জবুথবু, সংকুচিত হয়ে, গলে পড়ার মতো,
তার হাত-পাগুলোতে যেন সাড় নেই,
বিহ্বল হয়ে বসে আছে।
আমি তার চাহুনি দেখে শিউরে উঠলাম,
মানুষের চাহুনি এতটা উদভ্রান্ত হতে পারে!
এতটা উদাস, অন্যমনস্ক!
মনে হলো সে এখানে নেই।
একদল সাংবাদিক ঘিরে ধরলো তাকে,
কতো শত প্রশ্নের মুখে তাকে দাঁড়াতেই হতো,
অথচ সে নির্বোধ, নির্বাক, নিস্তব্ধ।
সবাই দেখলো তাকে ভাবলেশহীন
অথবা অধিক শোকে পাথর
আর আমি?
একটা একটা করে পাঁজর ভাঙার শব্দ শুনতে পেলাম,
স্বপ্ন ভাঙার শব্দগুলি কি নির্দয় হয়, তাই না?
অপার সমুদ্রের সর্বগ্রাসী পাড় ভেঙে পড়ার চেয়েও মারাত্মক,
বোশেখের সর্বনাশা ঝড়ে,
ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে থাকে কতো মহীরুহ,
কতো শত বটবৃক্ষের পতন ঘটে ছোট্ট উঁইয়ের কাছে,
আর পরম যত্নে লালন করা
স্বপ্নগুলো,
যখন ভেঙে পড়ে,
তার শব্দটা বুঝি মানুষের বোধের বাইরে চলে যায়।
আহা! পরম যত্নে লালন করা স্বপ্নগুলো,
কলিজার টুকরো, নাড়িছেঁড়া ধন।
সমস্ত উচ্চাকাঙ্খা দিয়ে
যাকে বাড়তো দেয়া হয়েছিলো,
সে একদিন পোঁছে যায় সাফল্যের সিঁড়িতে।
শেকড় ছিঁড়ে যখন আকাশে ওড়ে,
হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো কেউ এসে
তাকে সম্মোহিত করে,
উদভ্রান্তের মতো সে ঝাপ দেয় মৃত্যু উপত্যকায়।
আহা!পরম যত্নে লালন করা স্বপ্নগুলো,
ঝাপ দিলো মৃত্যু উপত্যকায়
আর স্বপ্নালু চোখদুটিকে টেনে নিয়ে এলো
আদালতের বারান্দায়, বিচার দন্ডের সম্মুখে।
স্বপ্ন ভাঙার শব্দ তাকে শুনতে হলো,
শুনতে হলো কলিজা ছেঁড়ার আর্তনাদ, আপন মৃত্যু পরোয়ানা।
আহা!পরম যত্নে লালন করা স্বপ্নগুলো,
যখন পাখি হতে চায়,
অনাকাঙ্ক্ষিত বিষের বাঁশিতে তার পতন ঘটে,
ডানা গজানো অন্ধ উঁইয়ের মতো।
আর এভাবেই হারিয়ে যায় সোনালী ভবিষ্যৎ
আমাদের স্বপ্নের আকাশ থেকে।
এমআই