জী হুজুর!
আজকাল নিজেকে আবিষ্কার করি,
একটা শক্তিশালী রাজদণ্ডের নীচে।
ভিষণ উন্মত্ত হয়ে পদলেহনে ব্যাস্ত।
কখনো কখনো গলে যায় বরফের মতো,
অথচ এই বরফখন্ডটি ছিলো সুতীক্ষ্ণ, ধারালো।
কথা ছিলো হুকুমতের ত্রুটি হলেই,
চোখা চোখা বরফ ঝাঁক হয়ে টুকরো টুকরো করে দেবো,
মিথ্যে কথার ঝুলি, মন ভোলানো অহেতুক স্বপ্নগুলো।
আগে কখনোই আয়েশি কবির মতো
মাংসল, তেলতেলে ছিলো না এ হাতের তালু।
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, শ্লোগান লিখতে গিয়ে,
হাতদুটো হয়েছিলো কর্কশ, ছন্দহীন।
আজকাল খুব বেশি ছন্দের গড়াগড়ি,
টগবগ করে ফোটে নলেন গুড়ের মতো,
কবিতারা হয়ে ওঠে কড়া পাক সন্দেশ,
ছন্দের আহ্লাদে মোহনীয় হয়ে।
আজকাল কলমটা গদগদ হয়ে ওঠে,
নুয়ে পড়া কন্ঠে কি সহজেই বলে যায়,
হে মহামান্য! হে রাজাধিরাজ!
অথচ এ কলমটা তীক্ষ্ণ তীরের মতো,
ভিষণ সুচালো ছিলো,
এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারতো,
অহেতুক গলাবাজি,
চিরে দিতে পারতো,
রাজ সিংহাসনের আরামদায়ক পট্ট।
আজকাল কলমেরা স্বভাবটা পাল্টেছে,
রাজার সিংহাসন?
সে তো দূর হিমালয়।
সেপাইয়ের চোখ লাল গেয়ে ওঠে, জী হুজুর!
সেপাইয়ের ভ্রুকুটি মহা ত্রাসে জী হুজুর!
কলমটা কি যে বলে জানেনা নিজেই।
আজকাল মন খুব ফুরফুরে থাকে।
বন্যার প্লাবনে ভেসে যায় লোকালয়,
কবিতায় প্রাণ পায় বৃষ্টির রূপ।
দাবানলে জ্বলে যায় কতো যে সবুজ বন,
কবিতারা ওম নেয় উষ্ণতা পেয়ে।
আজকাল আত্মাটা ভিষণ আত্মহারা,
স্বপ্নে বা জাগরণে নতজানু নীতি।
ঘরে পোষা বেড়ালটা মিউ মিউ ডাকলেই,
ভুল করে বলে ওঠে, জেগে আছি, জী হুজুর!
মাঝরাতে স্বপ্নেরা অহেতুক হানা দেয়,
দুঃস্বপ্নের মতো গেয়ে ওঠে, জী হুজুর!
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৭ ডিসেম্বর ২০২১।