এ পথটা
তোমরা যদি এখনই হাঁটতে শুরু না করো,
তাহলে কবে পৌঁছাবে বলোতো?
তোমাদের আরও আগে,
কতো দল চলে গেলো এই পথ ধরে।
তারা কেউ পৌঁছেছে, কেউবা হারিয়ে গেছে মাঝপথে,
মিলিয়ে গেছে মহা শূন্যতায়।
সে খবর নাই বা জানলে,
সে খবর লেখা আছে অসীমের মাঝে।
তবু তোমাদের হাঁটতে হবে, হাঁটতেই হবে।
চেয়ে দেখ, তোমাদের দুটো পায়ে,
জড়িয়ে রয়েছে এক আদিম শেকড়।
তখন তোমরা ব্যাস্ত ছিলে,
পারষ্পরিক সৌহার্দ্য বিনিময় আর হাস্য-কৌতুকে।
তোমাদের ঘরে ঘরে বাদ্য বাজিয়ে হতো নৃত্যশৈলী,
কবিগানের লড়াই আর বিজাতীয় দিবসের ঝকমারি।
তোমরা ভেবেছিলে, তোমরা থাকবে,
এই ফুল-লতা-পাখি-পতঙ্গ ঘেরা বাসস্থানকে,
তোমরা চিরস্থায়ী ভেবে মগ্ন ছিলে।
তাই অনায়াসে জড়িয়ে গেছো,
মায়া-মোহ টানে গড়া আদিম শেকড়ে।
পাশ দিয়ে চলে গেলো দলে দলে,
ভিষণ সাহসে ভরা নব্য যুবক!
তারা জানতো তাদের যেতে হবে।
তাই দারুণ সাহসে তারা চলে গেলো।
তারা নিয়তিকে টেক্কা দিতে পারতো,
রাস্তার সমস্ত জঞ্জাল দু'হাতে টেনে ছিঁড়ে
নিজেদের পথ তারা তৈরি করে নিলো।
বিধাতাও বোধ করি মুচকি হাসেন,
তারুণ্যে ভরপুর মুখগুলো দেখে।
তারা বাঘের গলায় বেঁধে দিতে পারে ঘন্টা,
পাথরের বাঁধ দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারে খরস্রোতা নদীর মুখ,
নারীদের তারা চতুর্দোলায় করে নিয়ে যায় কাঁধে তুলে,
ঠিক যেন ভোরে ফোটা সুরভিত জুঁই।
দলে দলে সাহসী, বিনয়ী তরুণ
তোমাদের পাশ দিয়ে চলে গেলো।
চেয়ে দেখ, ধানক্ষেত, কচিপাতা, প্রভাত কিরণ,
সবার মনেই সেই বীরত্বগাঁথা।
তারা তো হাঁটছে না, ছুটছে,
তারা ছুটে চলেছে অতুল পরাক্রমে,
সত্যের সূর্যকে আনতে।
জালিম হাতের রাজদণ্ডটা কেড়ে নিয়ে,
তাওহীদি হুংকার তুলতে।
জেনে রেখ, এ পথটা চিরকাল এভাবেই
জনতার পদভারে কম্পিত হবে,
দলে দলে চলে গেছে, দলে দলে চলে যায়,
দলে দলে চিরকাল যাবে।
আমার কি দায় বলো?
তোমরা যদি না ওঠো,
যদি না ছিঁড়তে পারো আদিম শেকড়,
এমনিই যদি থাকো ভ্রান্তিতে মশগুল।
আমি তো চলেই যাবো আমার রবের কাছে,
তোমরাই রয়ে যাবে চীর ঘৃণিত।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৮ ডিসেম্বর ২০২১।