বুধবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
হেরে যাওয়া মন
দুটো মানুষ একই দিকে ছুটে চলেছে ক্রমাগত,
সুখ ও স্বপ্নের দিকে,
শান্তি ও স্বস্তির দিকে।
দুটো মানুষ একই পথে ছুটে চলেছে নিরন্তর,
তাদের চোখের ওপর দুলছে রঙচঙা প্রজাপতি।
তারা ছুটতে থাকে,
প্রজাপতি উড়তে থাকে।
স্বপ্নগুলো এভাবেই উড়ে উড়ে যায়,
হাতের নাগাল থেকে সরে সরে যায়।
মানুষদুটো দারুণ বিতৃষ্ণায় বিষন্ন হয়ে ওঠে,
পরষ্পরকে দাঁড় করিয়ে দেয় আসামির কাঠগড়ায়।
চলতে থাকে বাদানুবাদ, নানান যুক্তির কৌশল।
তাদের মাঝে একজন, দুজন করে ঢুকে যায়
কতগুলো আলাদা মানুষ।
কেউ আগ্রহে, কেউবা অনাগ্রহে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে
বিচরণ করে তাদের চোখে, তাদের মগজে।
আর সপ্নের প্রজাপতি চিরকাল রয়ে যায় স্পর্শনাতীত।
দুটো মানুষ নিজেদের বেঁধে নিয়েছিলো,
ভারি মজবুত, মসৃণ আর মমতা মাখানো,
নরম রোদের মতো উষ্ণ সুতো দিয়ে।
তারা মুখরিত ছিলো তাদের সম্পর্কের সৌন্দর্য্যে।
চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ,
খাবার টেবিল জুড়ে সুবাসিত ধোঁয়ায়,
একটা সুখ সুখ অনুভূতি ছড়িয়ে যেতো পারিপার্শ্বিকতায়।
এভাবেই চলতে পারতো গল্পটা,
এভাবেই চলার কথা ছিলো।
অথচ অবধারিতভাবে আরও কিছু মুখ,
আরও কিছু সম্পর্কের সুতো জড়িয়ে যায়,
তাদের মজবুত, মসৃণ, কোমল সুতোর সাথে।
তারা কেউ থাকে বোধের সীমার মাঝে,
কেউবা অবোধ, ছেলেমানুষীতে ভরা।
হাজারটা দাবী আর হাজারটা না পাওয়ার আক্ষেপ,
তাদেরকে বিষন্ন করে দেয়, বিরক্ত করে দেয়,
তারা আক্রান্ত হয় না মেলান্তির খরায়।
একটু একটু করে ছিঁড়ে যায় মসৃণ, মায়াময় সুতোটি।
আজকাল সুতোগুলো এভাবেই ছিঁড়ে যায়,
স্বপ্নের প্রজাপতি চিরকাল রয়ে যায় স্পর্শনাতীত।
অথচ একটুখানি সহনশীলতা
কিংবা একটুখানি হেরে যাওয়া মন,
তাকে চিরকাল বসিয়ে দিতে পারতো,
মহানুভবতার চীর বিজয়ীর সিংহাসনে।
সম্পর্কের মজবুত, মসৃণ, মমতা মাখানো সুতোটি,
আমৃত্যু রয়ে যেতো অক্ষয়,
বংশ পরম্পরায় অনিঃশেষ রয়ে যেতো বংশ পরিচয়।
আসলে এসব কিছুই হয় না।
হেরে যাওয়া সম্পর্কগুলো হেরে যায়,
হার না মানা অসহিষ্ণু জিদের কাছে।
হয়তো এখনো তারা ছুটে চলেছে,
সেই রঙচঙা প্রজাপতিটাকে ধরতে,
একই পথে, একই ভাবে
অথচ কি সমান্তরাল,
রেললাইনের মতো,
কেউ আর কাউকে ছুঁতে পারবেনা কখনো।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৯ ডিসেম্বর ২০২১।