বিস্ময়কর দেনমোহর
খানিকটা তর্ক-বিতর্ক আর হট্টগোলের পর
দেনমোহর ধার্য করা হলো মেয়েটির।
টাকার অংক নিয়ে কন্যার পিতা যতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন,
তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন আত্মীয়-পরিজন,
প্রতিবেশী কেউ কেউ, সর্বপরি কন্যার বান্ধবীগন।
সময়ের ট্রেন্ড যে,
টাকার অংক যত বাড়ে,
বিয়ের স্ট্যাটাস তত বাড়ে।
তারপর —
লোকমুখে একান ওকান হতে হতে
গল্পের রঙে প্রলেপ পড়তে থাকে অবিরাম।
অতিশয় জোরাজুরিতে পাঁচ লাখের যে গল্পটা শুরু হয়েছিল,
মুখে মুখে তা একদিন
পঞ্চাশ লাখের আষাঢ়ে গল্পে গিয়ে পৌঁছায়।
ততদিনে হয়তো তারা সুখে-শান্তিতে আছে,
হয়তোবা বনিবনা হয়নি, সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
এ গল্পটা প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকে।
এটা একটা সামাজিক বিবাহের গল্প।
একটা বলিষ্ঠ দেনমোহরের গল্প।
অথচ—
মাত্র পনেরোশো বছর আগের কথা,
উম্মে সুলাইম!
কি অপূর্ব আভিজাত্যে!
আপন হাতে রচনা করলেন দেনমোহর।
নিজের ব্যাক্তিত্বকে যে অপার্থিব শিখরে তিনি তুললেন,
পৃথিবীর তাবৎ নারী হেরে গেলো সেই প্রতিপত্তির কাছে।
উম্মে সুলাইম!
তাওহীদে বিশ্বাসী নারী,
নিজের দেনমোহর নির্ধারণ করলেন স্রস্টাকে,
স্রস্টাকে খুঁজে পাওয়ার পথটাকে।
কি বিনয়ের সাথে মেনে নিলেন আবু তালহা।
এই সম্মানিত মানবীকে পেতে হলে
তাঁকে কন্ঠে ধারণ করতে হবে বিশ্বাসের পুষ্পমাল্য।
তিনি জানলেন এবং মানলেন।
সেই জান্নাতি রমনীকে জয় করতে গিয়ে,
জয় করলেন প্রিয় স্রস্টাকে।
স্রস্টার অনুগত পথটাকে।
উম্মে সুলাইম!
কি অপার্থিব রমনী!
নিজের দেনমোহর ধার্য করলেন শুধু ইসলাম।
বিশ্বাসের অভূতপূর্ব বিনিময়!
চিরকালের মতো স্রষ্টাকে বেঁধে নিলেন আপন আত্মার সাথে।
উম্মে সুলাইম!
আলোর পথের প্রিয় অগ্রবর্তিনী।
পনেরোশো বছর পরে অথবা আরও অনেক পরে,
বিশ্বাসের সমস্ত মাধুর্য নিয়ে
দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন আপনি
আর আপনার বিস্ময়কর দেনমোহর!
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২১ ডিসেম্বর ২০২১।