কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বিজয় উৎসব উপলক্ষে গুণিজন সংবর্ধনা পেয়েছেন পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান সেলিমা বেগম।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় শহরের জয়নুল আবেদীন পার্কের বৈশাখী মঞ্চ-২ এ জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গুণিজন সংবর্ধনা দেয় বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনা পেয়েছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ, শেখ হারুন অর রশিদ, বিমল পাল ও বীরাঙ্গনা রেজিনা বেগম কমলা।
এছাড়াও গুণিজন সংবর্ধনা পেয়েছেন আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাছ উদ্দিন খান, বহুরূপী নাট্য সংস্থার সচিব শাহদত হোসেন খান হিলু ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংবর্ধনায় সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এজন্য আজ আমরা মাথা উচু করে কথা বলতে পারছি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গুণিজনদের সংবর্ধনা দিতে পারছি।'
তিনি বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া সোনার বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। সারাদেশে সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যেই তা সম্ভব হয়েছেন। তবে, একটি কুচক্রী মহল দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে সর্বদা তৎপর রয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে দেশ বিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র সবাইকে একসাথে মোকাবেলা করতে হবে।'
বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা তখন টগবগে যুবক ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তবে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ভয় করে অনেকে যুদ্ধে না গিয়ে রাজাকার হয়েছে। এসব রাজাকারদের স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। সেটি ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
এসময় গুণিজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান সেলিমা বেগম।
তিনি বলেন, আমি কোন গুণিজনের সারিতে পড়ি কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি শুধু এটুকুই বুঝি আপনারা আমার পাশাপাশি বাকি যাদের নির্বাচিত করেছেন তারা একেকজন হচ্ছেন প্রকৃত গুণিজন, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব, অনেক বেশি সন্মানিত। তারা যদি গুণি বটবৃক্ষ হন, আমি সেখানে চারাগাছ মাত্র।
নিজেকে একজন লড়াকু নারী যোদ্ধা হিসেবে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন উল্লেখ করে সেলিমা বেগম বলেন, ১৯৮৮ সালে ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে পড়াশোনা করি। ওই বছরেই নিজের পছন্দে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় আমার। বিয়ের পর একই বছর প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করি । এরপর পরপর দুই সন্তানের মা হই। যার ফলে পড়াশুনায় পাঁচ বছরের গ্যাপ।
সেখানেই থেমে যেতে পারতো আমার জীবন। কিন্তু না, আমার অদম্য আগ্রহে ১৯৯৪ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে প্রাইভেটে এইচএসসি পাশ করি। ফ্যামেলির আর্থিক সমস্যার কারনে ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাস করেই একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ক্যাশে চাকুরীতে যোগদান করি।
তিনি বলেন, তখন নিজেকে কর্মক্ষেত্রে ভাল করার প্রত্যয়ে চাকুরি, ছেলেমেয়ে ও সংসারের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাই এবং পরবর্তীতে সাফল্যের সাথে এমবিএ পাশ করি। কয়েকটা ব্যাংক পরিবর্তন করে চাকুরির ছাব্বিশ বছরের মাথায় আজ আমার এই অবস্থান।
সেলিমা বেগম আরও বলেন, আমার এ পথ খুব সহজ ছিল না। অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ আমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এই ছাব্বিশ বছরে। যা আজ ভাবলেও অবাক হয়ে যাই। যখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে একটা স্টেবল অবস্থায় চলে যায়, তখন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পিছিয়ে পড়া নারীসহ দুস্থ শিশুদের নিয়ে সামাজিক কাজ করতে থাকি।
তিনি বলেন, যার জন্য কিছু নারী সংগঠন, শিশু সংগঠন, স্কুল ও কলেজসহ বেশ কিছু সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করছি। আজ নিজের এই অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে আমার ভাবনা হচ্ছে- দেশের একটি নারীও যেন বেকার না থাকে ও পরমুখাপেক্ষী না থাকে। যার যেমন যোগ্যতা, তা নিয়েই যেন সবাই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করে। আমি নারীদের সেই অনুপ্রেরণা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা দিয়ে থাকি। সে কারনেই আমি নিজেকে একজন লড়াকু নারী যোদ্ধাই মনে করি।
অনুষ্ঠানে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/এসএ