মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত স্টেশন রোডস্থ জেলা আহলে হাদিস জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার জমি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ এ দাবী করেন। সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিবৃন্দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ মসজিদের অফিস সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মসজিদের মুসল্লিবৃন্দ ও কমিটি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের কাছে অভিযোগ করছি যে, ওয়াকফে মোহাম্মদী ওয়াকফ এষ্টেট” নামে ওয়াকফকৃত বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয় হতে তালিকাভুক্ত দিনাজপুর জেলা আহলে হাদিস জামে মসজিদের ২৬ শতক জমির মধ্যে ১৫.৯৭ শতক জমির উপর মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও গায়ের জোরে অদৃশ্যশক্তির খুটির জোরে নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে দিনাজপুরের ঈদগাহবস্তি নিবাসী মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বুলবুল। এই জমি বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয় হতে তালিকাভুক্ত যার ইসি নং-২০১৯৪।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৩-০৪-১৯৫৪ ইং সালে ১১৪৯৬ নং কবলা দলিলমূলে স্থানীয় আহলে হাদিস অনুসারী কতিপয় ইসলামপ্রিয় ও ধর্মভীরু ব্যক্তি মৌলভী হাজী জমির উদ্দীনসহ ১০জন ব্যক্তি উক্ত জমিটি আহলে হাদিস কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান তৈরীর জন্য ক্রয় করেন। পরে উক্ত ক্রেতাগণ ২৫-০৯-১৯৫৪ ইং তারিখে আহলে হাদিস মসজিদ, দারুল হাদিস মাদ্রাসা, একটি কুতুবখানা লাইব্রেরী ও কোরআন হাদিসের প্রচার ও প্রসারের উন্নতিকল্পে উক্ত সম্পত্তি ১৮৯৮৬ নং দলিলমূলে ওয়াকফ করে দেন। এর পর হতে উক্ত জমিতে মোতাওাল্লি কর্তৃক দিনাজপুর কেন্দ্রীয় আহলে হাদিস জামে মসজিদ, রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা আহলে হাদিস জনগোষ্ঠির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, তাদের অবর্তমানে তৎকালিন মোতাওয়াল্লিদের সঠিক ব্যবস্থপনা না থাকায় এবং তাদের কারও কারও আত্মসাতের লিপ্সা থাকায় ওয়ারিশরা দলিল সৃজন করে খাজনা খারিজ ও রেকর্ড নিজেদের নামে করে নেয় এবং তা বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋন গ্রহণ করে। পরবর্তিতে ঋন পরিশোধ না করায় উক্ত ওয়াকফকৃত জমি নিলামে উঠে। নিলামে ডেকে নিয়ে রিসিভারের মাধ্যমে দখলে নেয় ঈদগাহবস্তি নিবাসী নুরুল হুদার পুত্র মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বুলবুল।
সংবাদ সম্মেলনে অতিতে বিস্তারিত তথ্য উস্থাপন করে আরো বলা হয়, গত ২১-১২-২০১৯ ইং তারিখ মসজিদ কমিটি মামলা করে যার নম্বর ২১/১৯ অন্য। এ ছাড়া অস্থায়ী নিশেধাজ্ঞা চেয়ে আরো একটি মামলা করা হয়। এ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ওয়াহিদুজ্জামান বুলবুলকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলে। বিবাদী বুলবুল উক্ত মামলার আরজীর বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি, মামলাটি খারিজ এবং মামলাটি দেউলিয়া আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তিতে মামলাটি ঢাকায় দেউলিয়া আদালতে স্থানান্তর করে। মসজিদ কমিটি উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন মামলা করলে দেউলিয়া আদালতের সকল কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী ওয়াহিদুজ্জমান বুলবুল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ ৬ জন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিবাদী ওয়াহিদুজ্জামান বুলবুলের বিরুদ্ধে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন এবং হাইকোর্ট পুর্নাঙ্গ শুনানী শেষে দ্রুততগিতে নিষ্পত্তির জন্য বলেন। পরবর্তিতে হাইকোর্ট ৬ মাসের জন্য স্ট্যাটাসকো বর্ধিত করেন। করোনা সংক্রমনের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার অটো বর্ধিতকরণে প্রজ্ঞাপন জারী করে। সে অনুযায়ী স্ট্যাটাসকো বহাল থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আদালতের নিশেধাজ্ঞা অমান্য করে বিবাদী ওয়াহিজ্জামান বুলবুল উক্ত সম্পত্তিতে দোকানঘর নির্মাণ করে। মসজিদ কমিটি প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম নির্মান বন্ধ করে দেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মান কার্যক্রম বন্ধসহ উক্ত দোকানগুলি যাতে খুলতে না পারে, সেজন্য দোকানগুলি সীলগালা করে তালা-চাবি প্রশাসনের জিম্মায় রাখার অনুরোধ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দীন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ মোঃ তোজাম্মেল হক, প্রচার সম্পাদক মোঃ রাজিউল কবির মিলু, অফিস সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক, সদস্য মোঃ রুস্তম আলী, মোঃ ওবায়দুর রহমান, মুসল্লি মোঃ সাইদুর রহমানসহ মসজিদ কমিটির অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/ইএইচ