জন্মের গন্ধ গায়ে লেগে আছে যে শিশুটির,
সেও একদিন মাটির পরত গায়ে মেখে বড়ো হয়।
সেও একদিন মাটিকে ভরসা করে,
টলোমলো দুটি পায়ে, শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
মাটির সাথে খেলা,
মাটি নিয়ে খেলা,
মায়ের অগোচরে টুপ করে একমুঠো মাটি
মুখে পুরে দেওয়া।
এসবই চলতে থাকে কচিকাঁচা ছেলেবেলাটা ঘিরে।
একটু বড় হতেই,
প্রবল বর্ষণে কাদামাটির ওপর উদ্দাম গড়াগড়ি।
মাটির সাথে বড়ো হয় মানবশিশু,
মাটির সাথে তার সম্বন্ধটা বড়ো নিবিড়।
অতঃপর একদিন —
জন্মবৃত্তান্ত জানা হয়ে যায় তার।
মাটি থেকে উৎপত্তি, মাটিতেই সমাপ্তি।
গুরুজনের সতর্কবার্তা, "লাফিয়ে চলো না, মাটি ব্যাথা পাবে,
মরার পরে মাটির ভেতরেই যেতে হবে তো।"
ধাক্কা লাগে বুকের ভেতর।
ভারি রহস্যময় মনে হয়
পায়ের নীচের আদিগন্ত বিস্তৃত ধুসরতাকে।
এতো চেনা, যা ছোঁয়া যায়, ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যায়,
চটকে বানিয়ে ফেলা যায় পানির পাত্র,
তাকে ভারি দুরূহ মনে হয় বেড়ে ওঠার সময়টাতে।
আমি তো মধ্যবয়সী বটের মতো সাবেক হতে চলেছি,
বয়সের বিচিত্র ঘাটগুলো পার হতে গিয়ে,
মাটির সাথে গড়ে উঠেছে নিবিড় সম্বন্ধ।
বহুদিনের খরার পর বৃষ্টির ছন্দে,
মাটির সোঁদা গন্ধ টেনে নেই বুক ভরে,
নিমেষে মুছে যায় বহু শতাব্দীর শুষ্কতা।
মাটির কলিজা চিরে বেরিয়ে আসতে দেখি,
অজস্র বৃক্ষ-তরু-লতা।
দূর্বাঘাসের দল পিলপিলে পিঁপড়ের মতো
সমস্ত মাঠখানা ভরে যায়।
সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে পৃথিবী।
মাটির প্রতি বিমুগ্ধতার আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে দেখি,
একটি সুক্ষ্ম অদৃশ্য সুতো,
মাটির ভেতর থেকে উঠে
আদম সন্তানের কলবের ভেতরটা দীর্ণ করে,
সপ্ত আকাশ পেরিয়ে ছুটে গেছে আরশের অধিপতির কাছে।
একটা বয়সী বটের ভারি ইচ্ছে করে,
সেই অদৃশ্য সুতোর টানে,
মাটির মায়া ছিন্ন করে পৌঁছে যেতে,
মাটির মালিকের কাছে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২২ ডিসেম্বর, ২০২১
সময় জার্নাল/এসএ