একটু স্নেহের হাত
জানালার শার্সিটা বন্ধ করেই দেখি
ঘরের মধ্যিখানে অন্যরূপ,
বাইরের পৃথিবীতে বিচিত্র কোলাহল,
ঘরটা শান্ত কতো, কি নিশ্চুপ!
ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়, ভিখারিরা ডেকে যায়,
রিকশার জটলা, ট্যাক্সির হর্ণ,
কোথাও বা উদ্দাম গান বেজে চলেছে,
চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, কি যে অকারণ।
ঘরের বাইরে খুব ঠান্ডায় জবুথবু,
মাঘ এসে নিঃশ্বাস ফেলছে,
সূর্যটা এসময় নিজেকে আড়াল করে
কুয়াশায় লুকোচুরি খেলছে।
মাঝে মাঝে গাছপালা শিরশিরে দুলে ওঠে,
হিমালয় ফুঁ দেয় বরফের।
অকারণ কাজগুলো শিকেয় উঠিয়ে রেখে
ঘরটা উষ্ণ রাখি আরামের।
কবিতার বই খুলে, জানালার পাশে বসে,
কম্বলে পাদু’টো ঢাকবোই,
গরম কফির মাঝে ডুব দিয়ে নিমেষে
দেহখানা আহ্লাদে রাখবোই।
শীতটা আয়েশ করে উদযাপনের দিন,
এতকাল তাই শুধু জানতাম।
কবিতার খাতা জুড়ে নানান ছন্দ ভরে
শীতকেই ডেকে ডেকে আনতাম।
বেশ ছিলো দিনগুলো, ফায়ার প্লেসের পাশে,
কবুতর রোস্ট আর পিঠেতে,
মাঝে মাঝে জনাদশ বন্ধু-স্বজন নিয়ে,
পিঠেপুলি উৎসবে, মিঠেতে।
জানতাম শীতে ঘরে উষ্ণ আরাম
আর গ্রীষ্মে ঠান্ডা হাওয়া স্বাভাবিক।
ভুলেই ছিলাম আমি দরজার ঐ পাশে,
বেঁচে আছে জীবনের অন্যদিক।
সেদিন ভোরের বেলা স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
হাঁটতে গিয়েই দেখি রাস্তায়,
কি যেন কি পড়ে আছে কুয়াশা মোড়ানো ভোরে,
রাস্তার পাশে, ছেঁড়া বস্তায়।
হঠাৎ উঠলো নড়ে ছেঁড়া ছেঁড়া বস্তাটা,
আমিও দাঁড়িয়ে গেছি থমকে,
দেখি তার মাঝখানে ছয়টি মানবশিশু,
অনুভূতি কেঁপে ওঠে চমকে।
হাড় হীম এই শীতে কারও গায়ে ছেঁড়া জামা,
কারও বা নেংটিখানা সম্বল,
জড়াজড়ি করে আছে ঠকঠকে ঠান্ডায়,
চটের বস্তা অবলম্বন।
আহারে কি কচি মুখ! নিদারুণ অনাদরে,
পথের ধুলায় শীতে কাঁপছে।
শৈত্যপ্রবাহ এসে চটের বস্তা দিয়ে
জাতির ভবিষ্যৎ মাপছে।
একটু সহানুভূতি, একটু স্নেহের হাত,
ওদের মাথায় যদি থাকতো,
দেশটা পাল্টে গিয়ে, মমতার কালি দিয়ে,
মনোরম ইতিহাস লিখতো।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২১ ডিসেম্বর ২০২১।