তকমা
লা শরীক আল্লাহ!
আপাতদৃষ্টিতে কিছু শব্দ,
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্যশীল।
এ নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়নি কখনো।
আমাদের জন্ম-মৃত্যুর সাথে,
আমাদের বৈষয়িক সকল বিষয়বস্তুর সাথে,
অনায়াসে মিশে গেছে শব্দটি।
ছেলেবেলা মক্তবে সুর করে আমপারা পড়ার আগেই
শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটেছিলো আমাদের।
আমাদের অভ্যাসে ছিলো, আমাদের চর্চায় ছিলো,
শুধু চেতনার সমুদ্রে অথৈ ঢেউয়ের মাঝে লুকিয়ে ছিলো,
ডুবে ছিলো, লুকিয়ে থাকা অজস্র মণিমুক্তার ভীড়ে।
তাই খুঁজে পেতে তাকে দৃষ্টির সম্মুখে তুলে ধরার
ইচ্ছেটাও হয়তো জাগেনি।
লা শরীক আল্লাহ
আহা! কি নিরীহ শব্দাবলী।
অথচ এর উচ্চারণে কোথাও বারুদ জ্বলে ওঠে,
কারও বা গাত্রদাহ হয় প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে।
আমরা যদিও ভারি ছা-পোষা,
সেসব খোঁজও রাখিনা কখনো।
তবু শুনতে পাই—
এই শব্দটা যেখানেই বাজে
সেখানেই,
সাম্প্রদায়িকতার তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়।
এই শব্দটা যেখানেই বাজে
সেখানেই,
অপসংস্কৃতির পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়।
অথচ মক্তব থেকে উঠে আসা একঝাঁক সভ্য মানুষ জানেই না,
সাম্প্রদায়িকতা কাকে বলে।
লা শরীক আল্লাহর মক্তব থেকে বের হয়ে আসা সালাম মিঞা,
যখন জয় মা গুরুগৃহ থেকে আসা কমলাকান্তের সাথে
গলাগলি করে হাটে যায়,
আমার কানে শোনা সাম্প্রদায়িকতার সুর গুলিয়ে যেতে থাকে।
কিছু কচিকাঁচাকে নিয়ে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে বসলে
কেউ তাতে অপসংস্কৃতির রঙ চড়ায়।
অথচ নববর্ষের মাঝরাত্তিরের হুল্লোড়ে যখন ঠাস করে ঘুম ভেঙে যায়,
আমার চোখে দেখা সংস্কৃতির সরূপ ভজঘট পাকিয়ে যায়।
লা শরীক আল্লাহ!
আপাতদৃষ্টিতে কি নিরীহ শব্দাবলী!
আমাদের রক্ত-মাংসে মিশে আছে।
শব্দটিকে বাদ দিতে হলে, আমাদের সবাইকে বাদ দিতে হবে,
শব্দটিকে মুছে ফেলতে হলে, আমাদের মুছে ফেলতে হবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে।
অথচ আমরা অসংখ্য,
আমাদের গুনে শেষ করা যাবেনা কখনো।
সেই বৃটিশ আমল থেকে চলে এসেছে এই চেষ্টাটা,
আমাদের বারবার মুছে ফেলতে চেয়েছে কেউ কেউ,
তবু আমরা টিকে আছি।
আমরা সংখ্যায় এতো বেশি যে,
কেউ কখনো আমাদের শেষ করতে পারেনি,
তুমিও পারবেনা ছদ্মবেশী।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৮ ডিসেম্বর ২০২১।