শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

জেসমিন আরা বেগম এর গল্প ‘নাইরিয়া’

রোববার, জানুয়ারী ২, ২০২২
জেসমিন আরা বেগম এর গল্প ‘নাইরিয়া’

নাইরিয়া 

আজ আমার একমাত্র মেয়ে নাইরিয়ার বাগদান। বাড়িতেই অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যাবেলা। লোকজন এসে সাজানো শুরু করেছে। পাত্রের নাম কুম্বুচা। পরিবার ভালো, আমাদের সমপর্যায়ের। তবে ছেলেটাকে আমার তেমন পছন্দ হয়নি। কেমন যেন উড়নচণ্ডি টাইপ। কিন্তু মায়ের অতি আদরে বখে যাওয়া আমার একমাত্র সন্তান আর তার মায়ের খুব পছন্দ এই ছেলেকে। তাই আমি এ বিয়েতে  রাজি হয়েছি। আমার আদরের মেয়েটা বিয়ে হয়ে চলে যাবে তাই আমি মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর কথাই ভাবছি। কয়েক বিঘা জমি নিয়ে শহর থেকে দূরে আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ বাড়ি। গাছে গাছে পাখিদের কিচিরমিচির দেখি আর দেখি নিঃশব্দে পাতাদের ঝরে পড়া।   

আমাদের সম্প্রদায়ের ট্র্যাডিশন অনুযায়ী আমাদের অনুষ্ঠানাদিতে মানুষের মাংস রান্না করে মেহমানদের খেতে দেই। যে কোন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ এই আইটেম। আমরা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের মাংস খাই। ইদানীং আইনের কড়াকড়ির কারণে আমরা একটু লুকিয়ে করি কাজটা। বেশ কয়েকটা গোপন ফার্ম আছে যেখানে চুরি করা বা অভাবে পরে বাবা মায়ের বেচে দেয়া বাচ্চাদের খাইয়ে দাইয়ে মোটাতাজা করা হয়। আমার মেয়ের বাগদান উপলক্ষে আমি একটা ছেলেকে কিনে এনেছি। যুবক ছেলে, ওকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগে যায়। চওড়া কাঁধ, পেটানো মেধহীন দেহ, ঝাঁকড়া চুল আর তামাটে উজ্জ্বল গায়ের রং। ওর সারা দেহ থেকে যেন লাবণ্য উপচে পড়ছে। সবচেয়ে মায়াময় ওর কাজলটানা আয়ত চোখ দুটো। তিনদিন আগে ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এ রকম মানুষ রাখার জন্য আমাদের বেসমেন্টে একটা গোপন কক্ষ আছে। ওখানে তালা দিয়ে রেখে দিয়েছি ছেলেটাকে। আমরা আগেই কিনে আনি যাতে আগের খাবার বা ঔষধের কোন কেমিক্যালের অংশবিশেষ ওদের শরীরে থাকলে তা বের হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সময় পায়।

দুপুরের দিকেই স্পেশাল বাবুর্চি আর কসাই চলে আসবে, ওকে কেটে রান্না করার জন্য। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠৎ আমার মেয়ের হাসির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দূরে গাছপালার ভিতরে আমার মেয়ে আর হবু জামেই কুম্বুচা হেঁটে বেড়াচ্ছে আর গল্প করছে। ওদের খুশি দেখে ভালো লাগে। কিন্তু একটু পরেই আমার মেয়ের উত্তেজিত কান্নাজড়িৎ কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। মনে হচ্ছে ঝগড়া করছে। এরা প্রায়ই এমন ঝগড়া করে, এই বিয়েটা দেয়া ঠিক হচ্ছে কি না বুঝতে পারছি না। 
  
একটু পরেই সিঁড়িতে ধুপধাপ শব্দ করে দুজনে উপরে উঠে এলো এবং নাইরিয়ার রুমে ঢুকে গেলো। আর কিছুক্ষণ পরেই কুম্বুচার রাগি গলার স্বর শুনতে পেলাম। সে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলছে, 'আমি আমার বাবাকে দিয়ে তোমার বাবাকে এখনি ফোন করাচ্ছি বাগদান অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য। তোর মত নীচু মনের মেয়ের সাথে আমি বিয়ে করব না'। 

আমি বেশ শঙ্কিত বোধ করি, এই মুহূর্তে বিয়ে বাতিল করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ঘণ্টা তিনেক পরেও কুম্বুচার বাবার কাছ থেকে কোন ফোন না আসাতে আমি স্বস্থি বোধ করি। আমি ভাবি মনে হয় ব্যাটার রাগ পড়ে গেছে। আমি যে একটু আমার স্ত্রীর সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করব তারও উপায় নেই, তিনি গেছেন বিউটি পার্লারে। মেয়ের চেয়ে মেয়ের মাকে সুন্দর দেখানোটা যেন বেশি জরুরী! 

দুপুরের দিকে কসাই এলে চাবি নিয়ে ছেলেটাকে বের করতে গিয়ে দেখি সর্বনাশ, ছেলেটি নেই। ওই ঘরের একটা চাবি থাকে আমার কাছে আর একটা আমার স্ত্রীর কাছে। আমরা কাজের লোকদের ও ঘরে ঘেষতে দেই না। বলা তো যায় না, পুলিশে খবর দিতে বা ওদের পালাতে সাহায্য করতে পারে।   ছেলেটার খাবার আমার স্ত্রীরই দেয়ার কথা প্রতি বেলায়। এতক্ষণে আমার স্ত্রী ও চলে এসেছে। আমি জানতে চাইলাম ওই ঘরের চাবিটা কোথায়?
- ওটা তো নাইরিয়ার কাছে।
- দেখো তো নাইরিয়া কই? 
আমি আর আমার স্ত্রী মিলে নাইরিয়ার ঘরে গিয়ে দেখি ও ঘরে নেই। বাড়ির কোথাও নাইরিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমার স্ত্রী বলল, 'ওই ছেলেটাকে বাড়িতে আনার পর প্রথমদিন নাইরিয়াকে সাথে নিয়ে খাবার দিতে গেছি। তারপর নাইরিয়া আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে ওর কাছে রেখে দিয়েছে। নাইরিয়াই ছেলেটাকে রোজ খাবার দিত'। 

আমি বুঝতে পারি আমার মেয়ে ছেলেটার মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছে, তাই ইচ্ছা করেই কুম্বুচার সাথে ঝগড়া করেছে। কুম্বুচার হাত থেকে নিজেকে আর আমাদের হাত থেকে ছেলেটাকে বাঁচাতে নাইরিয়া ছেলেটাকে নিয়ে পালিয়েছে। না, আমি থানা পুলিশ করব না। যদিও পুলিশের বড় কর্তারা জানে যে আমরা মানুষের মাংস খাই, তারা নিজেরা আমাদের অনুষ্ঠানে এসে খায়ও, তবুও লিখিতভাবে আমি তাদের জানাতে পারি না যে খাওয়ার জন্য আমি একটা ছেলেকে কিনে এনেছিলাম আর তার সাথে আমার প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে পালিয়েছে।   

আমার এখন একটাই চিন্তা, ওই ছেলেটা না আবার আমার মেয়েটা নিজে খেয়ে ফেলে বা খাদ্য হিসাবে বিক্রি করে দেয়!

লেখক পরিচিতি :

জেসমিন আরা বেগম, 
কেমিকৌশলী, ১৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। 
প্রাক্তন উপ-পরিচালক,  বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি)।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল