আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুদানের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সময় রোববার (২ জানুয়ারি) সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভে হতাহতের পর রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। খবর: বিবিসির।
আব্দাল্লাহ হামদক বলেন, ‘সুদানের গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য একটি নতুন চুক্তির প্রয়োজন ছিল, যেটা আমরা করেছিলাম। তবে চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত দায়িত্ব আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছি। মহান এই দেশের নেতৃত্বের জন্য অন্য কোনো পুরুষ বা নারীকে সুযোগ করে দিচ্ছি, যিনি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে সুদানকে একটি বেসামরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারেন।’
গত ২৫ অক্টোবর সুদানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে ক্ষমতা দখল করেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে গৃহবন্দি ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি।
সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নামে হাজার হাজার সুদানিজ। বিক্ষোভকারীদের দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
অরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে। সুদানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরব হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
বিক্ষোভ ও বৈশ্বিক চাপের মুখে গত ২২ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত সুদানের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে স্বপদে ফিরিয়ে আনেন দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তিও হয়।
তবে বেসামরিক সরকারকে ‘স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না’ বলে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি সুদানে পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন অব্যাহত রাখে দেশটির সাধারণ জনগণ।
এদিকে, রোববার (২ জানুয়ারি) সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে ফের গুলি চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এতে অন্তত দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে দাঁড়ালো ৫৬ জনে।
রোববার দেশটির রাজধানী খার্তুম ও পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমানে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দেশটির চিকিৎসকদের সংগঠন ‘দ্য সেন্ট্রাল কমিটি অব সুদানিজ ডক্টরস-সিসিএসডি’ এ তথ্য জানিয়েছে।
সিসিএসডির বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার রাজধানী খার্তুমে কয়েক হাজার মানুষ সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে টিয়ার গ্যাস এবং পরে অতর্কিত গুলি চালায়।
এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণ নিহত হন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমানেও বিক্ষোভে গুলি চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেকজনের মৃত্যু হয়।
সময় জার্নাল/এলআর