ফানুস উড়ানোর উৎসবে
তোমরা ভাবো আমি চাক্ষুষ,
আমার জ্বলজ্বলে চোখ দুটো দেখে তোমরা বারবার ভুল করো,
তোমাদের গৃহপালিত ঝগড়াঝাটিগুলো আমার সামনে এনে জড়ো করো,
তোমরা ভেবে নিলে এখানে এলেই সুবিচার পেয়ে যাবে।
তাই আমাকে বিচারকের আসনে বসিয়ে দিলে কি নিশ্চিন্তে!
দুটো ঘুটঘুটে কালো কর্নিয়া দেখে আমাকে জাগ্রত ভেবেছো,
ভেবে নিলে আমি আগাগোড়া সবটা দেখেছি,
তোমাদের ঝগড়ার আদ্যপ্রান্ত।
অথচ আমি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,
অবশ্য ঝগড়ার শুরুটাতে বেশ জেগেই ছিলাম,
শুরুতে রক্তটা টগবগ করছিলো আমারও,
হয় এসপার, নয়তো ওসপার, এমনই একটি ভাব নিয়ে,
সিনা টান করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তারপর ঝগড়াটা যখন চলতেই থাকলো,
সেই একঘেয়েমি হৈচৈ আর গলাবাজির সুরে,
ঘুম পাড়ানি গান এসে গেলো মনে।
তোমরা যদি না ডাকতে, সুখনিদ্রাটুকু এখনো রয়ে যেতো অপরিবর্তনীয়।
তোমাদের ডাকে আমি হন্তদন্ত হয়ে উঠলাম বটে,
তবে ঝগড়ার বিন্দুবিসর্গও আমার মনে নেই,
অথচ তোমরা আমাকে মস্ত বড়ো তালেবর ভেবে নিলে।
গতকাল ছিলো নববর্ষ,
সারারাত তোমরা ছিলে আতশবাজির উৎসবে,
ফানুস উড়ানোর উৎসবে ছিলো উচ্ছ্বাসের মাখামাখি,
আমি তার কোনো খবরই রাখিনি।
তবু আমার কাছেই তোমরা নালিশ নিয়ে এলে।
তোমরা স্বহস্তে যে আগুন উড়িয়ে দিলে আকাশের বুকে,
তা যখন তীব্র আক্রোশে মাটির পরে ফিরে এলো,
জ্বালিয়ে দিলো ছোট্ট কুঁড়ে, অট্টালিকা, মস্ত জনপদ।
তোমরা তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নালিশ নিয়ে এলে,
অথচ আগুন জ্বালাতেই ভালোবাসে।
ফানুসের আলো দিয়ে সমস্ত শহরটাকে তোমরা আলোকিত করেছিলে,
অথচ সে আলোর নীচে গোটা শহরজুড়ে যে নিকষ আঁধার ঘনিয়ে থাকে বারোমাস,
তোমরা তার খবরও রাখোনি কখনো।
কতো মুখ জ্বলে গেলো এসিডে, কতো বুক উপচে পড়ে লাল রক্ত,
কতো ঘরে একদানা ভাত নেই, কতো ঘরে টিমটিমে প্রদীপখানারও ভারি অভাব।
আর তোমরা —
এই হাড়হাভাতে শহরটাকে একটা রাতেই রূপবতী করতে চাইলে,
কিন্তু আগুন ভারি বিধ্বংসী হয়,
তোমাদের এই মেকি সাজসজ্জাটুকু জ্বালিয়ে দিতে ছুটে এসে পড়লো জনবহুল শহরটার ওপর।
যে আগুন পোড়াতেই ভালোবাসে,
তার স্বভাবের বিরুদ্ধে বিচার নিয়ে এলে এই অপদার্থ, অন্ধ মানুষটার কাছে।
অন্ধের কাছে কোন সুবিচার আশা করে আছো?
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১ জানুয়ারি ২০২২।