বুধবার, জানুয়ারী ৫, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে বছরব্যাপী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি নিয়ে করা গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগ্রহ করা নমুনার ১৭ শতাংশের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।
এ উপলক্ষে বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকালে বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সেমিনারে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্যাথলজিভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনার (১৭ শতাংশের) ক্যানসার চিহ্নিত হয়। যাতে পুরুষদের (৪০.৫ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৯.৫ শতাংশ) ক্যান্সারের আধিক্য রয়েছে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যানসারসমূহ হলো- মূত্রথলি ১০.২ শতাংশ, প্রোস্টেট ৯.৯ শতাংশ ও মুখগহ্বরে ৮.৫ শতাংশ।
এছাড়া নারীদের প্রধান ক্যানসারগুলো হলো- স্তন ২৩.৩ শতাংশ, জরায়ুমুখ ২১.৫ শতাংশ এবং মুখগহ্বর ৮.৯ শতাংশ। প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারের পরিমাণ পুরুষের ১১.২ শতাংশ ও নারীদের ৩১.৯ শতাংশ। নির্ণয়কৃত ক্যানসারের মধ্যে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা ৩১.৮ শতাংশ এবং এডেনোকারসিনোমা ৩১.২ শতাংশ।
এদিকে, হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এতে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১ হাজার ২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। এখানে পুরুষদের শনাক্ত হওয়া প্রধান ক্যানসার হলো- ফুসফুস ৯.৬ শতাংশ, লিউকেমিয়া ৯.৪ শতাংশ ও লিম্ফোমা ৯ শতাংশ। আর নারীদের স্তন ২৮.১ শতাংশ, থাইরয়েড ১৬.১ শতাংশ ও জরায়ুমুখের ক্যাসনার ১২.২ শতাংশ। এছাড়া শিশু ছেলেদের প্রধান ক্যানসার হলো- লিউকেমিয়া ৭১.৫ শতাংশ ও লিম্ফোমা ১০.৩ শতাংশ। আর শিশু মেয়েদের প্রধান ক্যানসার হলো লিউকেমিয়া ৬৬.৫ শতাংশ ও হাড়ের ক্যানসার ১১.৬ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যানসার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান বিএসএমএমইউ উপাচার্য। যাতে করে দেশে সঠিকভাবে ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা নির্ণয়, ক্যানসার রোগ প্রতিরোধ ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কাজে লাগানো যায়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান ও সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না। তাদের উত্থাপিত প্রবন্ধে সারাদেশে ক্যানসারের সঠিক তথ্য পেতে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি চালু এবং ক্যানসার রেজিস্ট্রির কারিগরী দিক উন্নত করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে অন্য বক্তারা ক্যানসার মোকাবিলায় ও করণীয় বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বদান, চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা, ক্যানসারভিত্তিক ডাটা সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার ও প্রাপ্ত ডাটাসমূহের বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, হেলথ ইনফরমেশন ইউনিটের প্রধান ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফি প্রমুখ।মা ১০.৩%। শিশু মেয়েদের প্রধান ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া (৬৬.৫%), হাড় ১১.৬%।
সময় জার্নাল/আরইউ