রক্তক্ষরণ
আমার ভেতর রক্তক্ষরণ হতে থাকে ভীষণ প্রখরতায়,
আমি ডুবে যাই, ভেসে উঠি, হাবুডুবু খেয়ে।
সবাই দেখছে কি নির্ঝঞ্ঝাট জীবন!
সাত চড়ে রা না করা একজন নিপাট ভদ্রলোক।
সবাই আমায় ভারি আপনার ভেবে নেয়,
আমার কাছেই জমা রেখে যায় গোপন কথার রাশি।
আমাকে কেউ কেউ ব্যাংক ভেবে নিয়েছে,
একটা বিশ্বস্ত কথার ব্যাংক।
সাত চড়ে রা না করা ভদ্রলোকেরা ভারি বিশ্বস্ত হয়।
অবসরে, নিভৃতে আমার কাছে এসে উগড়ে দিয়ে যায়,
হা-হুতাশ, লাঞ্ছনা আর ব্যার্থতার ইতিবৃত্ত।
তারা চলে যায় নিত্য কাজে, স্বাভাবিক জীবনে
অথচ আমি সমস্ত দিন কথার স্রোতে ঘুরি,
পরদুঃখকাতরতা আমাকে বিষন্ন করে দেয়,
আমার ভেতর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
প্রথমদিকে রক্ত ঝরতো চুইয়ে চুইয়ে,
পানসে রক্তের মাঝে হয়ে উঠতাম দুঃখবিলাসী,
কখনো মাগফিরাতের আশায় ধর্না দিতে বসে যেতাম
কাবার প্রভুর দরবারে।
বরাবর পশ্চিমমুখী হতে ভালোবাসি
তাই চারপাশের দুঃখী মানুষের দুঃখ নিয়ে
দেন দরবার করাটা ছিলো দারুণ উপভোগ্য।
কিন্তু আজ ক'টা দিন হলো নিজের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখি,
রক্তের বান ডেকে চলেছে।
আমার হাড়, মাংস, অস্থি, মজ্জা হয়ে মস্তিষ্কে ভরে যাচ্ছে
পুঁতিগন্ধময়, রক্তের ধারা।
আমি ছটফট করি,আমি অস্থির হই,
রক্তক্ষরণের উৎস খুঁজতে গিয়ে স্মরণাপন্ন হই মানুষের।
সবাই দেখে যায় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী
একজন নিপাট ভদ্রলোককে,
তাদের চোখের তারায় করুণা মিশ্রিত উদাসীনতা থাকে
আর আমি ছটফট করতে থাকি অকহতব্য যন্ত্রণায়,
ডুবে যাই রক্তের স্রোতে,
পুঁতিগন্ধময়, গাঢ় রক্তে।
আমি আবার হয়ে যায় পশ্চিমমুখী।
এই অদৃশ্য রক্তের স্রোত কেবল তিনিই দেখতে পাবেন,
এই আকুলতা হয়তো পৌঁছে যায় তাঁর মাগফিরাতের দরজায়।
তাই হঠাৎই আবিষ্কার করি,
আমার বিবেকের বাঁধ ভেঙে গেছে।
মানুষের বিশ্বাস, মানুষের আস্থা ক্রমান্বয়ে
আমার ভেতর সৃষ্টি করেছে বড়ত্বের অহমিকা,
আর বিবেকের মধ্যিখানে বসে আছে ইবলিশ।
আমার সংযমের বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়ছে,
ইবলিশের ছোঁয়া মিশ্রিত রক্তস্রোত।
এই রক্তস্রোত বন্ধ করার উপায় আমি জানি,
আমাকে ফিরতেই হবে সমস্ত আকুলতা নিয়ে,
আমাকে ফিরতেই হবে তাঁর কাছে,
মাগফিরাতের দরজাটাতো খোলাই আছে, তাই না?
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৭ ডিসেম্বর ২০২১।