অন্তহীন বন্ধু
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
সবাই চলে যায়, চলে যেতে হয়,
একটা মানুষকে নিঃসঙ্গ করে।
আয়ুর প্রতিটা ঘাট পেরোতে গিয়েই
কিছু মানুষ অবধারিতভাবে তাকে ছেঁড়ে যায়।
ফাল্গুনে নতুন পাতা গজানোর মতো করে,
তার জীবন জুড়ে আবার উঁকি দেয় নতুন কিছু মুখ।
কিছু বন্ধু, কিছু শত্রু, কিছু নিস্পৃহ মানুষের অস্তিত্ব।
তারা কেউ আসে ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে,
মমতার চাদর বিছিয়ে,
কেউ আবার না এলেও পারতো।
তবু তারা এসে যায়,
তাদের আসতে হয়।
আসা-যাওয়ার এই প্রথাগত বিধানে,
একজন নিঃসঙ্গ মানুষ স্মৃতির ভারে জর্জরিত হতে থাকে,
কেউ কেউ চিরস্থায়ী দাগ রেখে যায়,
নিঃসঙ্গ মানুষের অন্তর কুঠুরিতে।
কৈশোরে পাড়ার দুরন্তদের সাথে
ধানক্ষেত, গমক্ষেত আর হলুদ সর্ষের ক্ষেত পেরিয়ে,
রেলগাড়ী দেখতে যাবার তুমুল ইচ্ছা,
তাকে দ্রুত বড়ো করে দেয়,
তাই শৈশব তাড়াহুড়া করে তাকে ছেড়ে যায়।
যৌবনে মিছিল, মিটিংয়ে ছোটা, রাজপথে রক্তগরম
অথবা দক্ষিণা হাওয়ায় উড়ে আসা
নীল রঙা একখানা খাম,
তাকে হুট করে বড়ো করে দেয়,
নীল খাম তাকে স্বপ্নালু করে তোলে,
তাকে করে তোলে নির্বোধ অথবা কর্মচঞ্চল।
হয়তো নীল খাম রয়ে যায় কিছুদিন
অথবা সেও চলে যায় কালের স্রোতে,
আর লোকটা হয়ে ওঠে একজন নিঃসঙ্গ মানুষ।
সে আশ্চর্য হয়ে দেখে,
মাত্র ক'দিনেই তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে,
শৈশব, কৈশোর, যৌবন,
কতো শত চেনা মুখ, অসীমের স্রোতে।
সে নিজেকে আবিষ্কার করে,
কালের জোয়ারে সর্বস্ব ভেসে যাওয়া,
একটা শূন্য ভিটের ওপর,
স্মৃতির শব পাহারায় রত।
তার চারপাশে কোলাহল করে ওঠে,
নতুন কিছু মুখ, নতুন সুরে।
যে সুরের সাথে সংগত করা তার আর হয়ে ওঠে না।
সে শুধু নিঃসঙ্গতায় চির চেনা পুরনোকে খুঁজতে থাকে।
তার অনুসন্ধিৎসু মন,
তার আত্মসমর্পণের সহজাত প্রকৃতি,
তাকে পৌঁছে দেয় এক অন্তহীন বন্ধুর কাছে।
যে আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত,
কখনোই তাকে ছেঁড়ে যায়নি।
সমস্ত ব্যার্থতাকে মুছে দিতে,
মাগফিরাতের ডালি নিয়ে আছে,
একজন নিঃসঙ্গ মানুষের জন্য।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৬ ডিসেম্বর ২০২১।