অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা- ; কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর অমর কবিতাখানি: 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেই থেকে 'স্বাধীনতা' শব্দটি আমাদের।
৫০ বছর আগে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়েছিলো।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মহাক্ষণে আমরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্র কে গোছানো, সয়ংসম্পূর্ণ করতে বিভিন্ন চ্যালেন্জের মুখে পড়তে হয়।
সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি।স্বল্পোন্নত দেশের পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এখন উন্নয়নশীল দেশের তকমা বাংলাদেশের।
একটি দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন ওই দেশের তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষাব্যবস্থা। ৫০ বছরের বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন, ভবিষ্যতে প্রত্যাশা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত জেনেছেন মো: মাইদুল ইসলাম
আহমেদ ফেরদাউস খান
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী । তিনি বলেন,
যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, সেটা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তার মানে এই নয় আমরা কিছু পাইনি। অনেক কিছু পেয়েছি। তবে যতটুকু পাওয়া কথা ছিলো তা পাইনি। শিক্ষায়ও একই অবস্থা। দিন দিন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়ছে। যতটা বাড়ার কথা ছিলো, ততটা নয়। তাতে মানের দিক বিবেচনায় বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।
শিক্ষায় পাশের হার বাড়ানোর থেকেও মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষারও দরকার রয়েছে ব্যাপক। আমরা কারিগরি শিক্ষাকে আড় চোখে দেখি, যা অনুচিত। শিক্ষাজীবনেই একজন শিক্ষার্থী কিভাবে নিজেকে যোগ্য করে তুলবে, তা রাষ্ট্রের ভাবা উচিৎ।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে হবে। আধুনিক শিক্ষায় বিশ্বের চারপাশেও নেই বাংলাদেশ। আমরা বিদেশিদের প্রযুক্তি উচ্চমূল্যে কিনছি। নিজেরা কিছু করতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খুবই কম। যেগুলো হয়, সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাই স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে বলবো, আমাদের গবেষণা বা গবেষক বাড়ানো দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে গবেষণা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। পাশাপাশি এদেশে জন্ম নেওয়া মেধাবীদের মূল্যায়ন করা উচিৎ। প্রয়োজনে উচ্চমূল্য দিয়ে হলেও তাদেরকে দেশের সেবায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
ফারিয়া সুলতানা অমি
শেখহাসিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও জলবায়ু সংগঠক। তিনি বলেন,
তরুণদের চাওয়া তো অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রকাঠামো যেখানে সবকিছুর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকবে; ন্যায়বিচার ব্যাপারটার এই দেশে যথেষ্ট অভাব আছে, তাই সেখানে নজর দেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। আর দুর্নীতি, ঘুষ খাওয়া, শ্রেণিবৈষম্য এই বিষয়গুলোকে নিয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন ওঠা উচিৎ। তাহলেই রাষ্ট্র একটি সমান্তরাল গতিতে চলবে। শিক্ষাক্ষেত্রে ৫০ বছরে দেশ অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল-কলেজের গন্ডির মধ্যে আনতে পেরেছে এইটা একটা বড়ো সাফল্য বৈকি! তবে শিক্ষার গন্ডির মধ্যে এসেছে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী।
এখনো পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা শহরকেন্দ্রিক, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷ বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাতে আমাদের বেশি মানুষ প্রয়োজন৷ কারণ একটা দেশের মৌলিক কিছু কাঠামোর গঠন অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় এই শিক্ষা৷ তবে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী পড়ার ও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে৷
মো: সাইফুল ইসলাম
শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ তিতুমীর'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন,
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এই বাণী শুনেই আমরা আজ শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে যাচ্ছি। পাঠ্য বই পড়ে অনেকেই বড় বড় প্রাপ্তি ও সুনাম অর্জন করছি কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত হচ্ছি কি না এটা আমাকে রীতিমত ভাবাচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ৫০ বছরে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এটা মানতে হবে তবে সেটা বলবো পাঠ্য পুস্তাকের দিক থেকে। কারন আমরা এখনো প্রকৃত শিক্ষিত হতে পারিনি এটা বলতেই হচ্ছে কারন বাঙালীকে বলা হয় গুজবে ভাঙালী, হুজুগে বাঙালী আমরা যদি প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারতাম তাহলে অন্তত গুজব, হুজুক এইসব থেকে দূরে থাকতাম এবং একজন সুনাগরিক হিসেবে পরিচয় রাখতাম কিন্তু সেটা অনেকেই রাখছি না।
আমি বলবো তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই বই পড়ে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করার জন্য প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য খুব কম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। মাঝে মাঝে আমাকে ভাবায় আচ্ছা অন্য ১০ জন সাধারণ মানুষ যে কাজটা করে বিশেষ করে টিকটক ভিডিও, গান এবং প্রকৃত সংস্কৃতি বিকৃত করে যে সব অনলাইন অফলাইনে খারাপ কাজ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে এগুলে কেন একজন শিক্ষার্থী করবে? সে কেন ভিন্ন মন মানুষিকতা লালন করবে না? সে যে পড়াশোনা করে তার ভিতর একটা ভালো মন থাকতে হবে, সে চাইলেই অন্য সবার মত ব্যবহার করতে পারে না এই সব কাজ থেকে যেদিন তরুন প্রজন্ম বেরিয়ে আসবে সেইন বলা যাবে বাংলাদেশর স্বাধীনতার পূর্নতা পেয়েছে৷
কারন একমাত্র বাঙালী বীর সন্তানেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে সেই ভাষা সঠিক ভাবে লালন করা এবং নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা নিজেকে বাঙালী হিসেবে যোগ্য মনে করতে পারবো।
শিক্ষা ক্ষেত্রে চাওয়া বলতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শিক্ষার্থী বান্ধব সরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চতর শিক্ষা ক্ষেত্রেও নানা রকম শিক্ষার্থী বান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে উন্নত সারির একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগের থেকে শিক্ষার মান বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে তবে আমাদের উচিত সরকারের ইতিবাচক সিধান্ত গুলেকে সাধুবাদ জানিয়ে নিজেকে একজন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
একে অন্যের বিপদে আপদে পাশে থাকা। কথায় আছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না। আমাদের উচিত মানবিক কাজ করা, শিক্ষার মান রক্ষা করে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে শিক্ষার প্রসার করা এবং কুসংস্কার ও গুজব থেকে সচেতন হওয়া।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আশা রাখি বীর বাঙালীদের প্রতি সম্মান রেখে একজন খাঁটি বাঙালী হিসেবে দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকাটাই আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
তরুন প্রজন্মের জন্য বলবো অনলাইনকে ইতিবাচক ভাবে ব্যবহার করুন অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন, ভালোর সঙ্গে থাকুন, খারাপকে ত্যাগ করুন। নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ইতিবাচক ভাবে নিতে শিখুন।
পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সহ শিক্ষা মূলক বই পড়ুন যেমন গল্পের বই, কবিতার বই, মনিষীদের জীবনী, প্রমিত বাংলা ভাষার বই, ইত্যাদি। আর হ্যাঁ বাংলাদেশর সকল জেলার প্রতি সম্মান রেখে ইতিবাচক মানুষিকতা তৈরি করুন। নিজেকে রুচিশীল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন জীবন অনেক সুন্দর। তরুনদের জয়গানে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার স্বাদ পাক নবগত শিশু, বৃদ্ধ, তরুন,তরুণী এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
শাহাদাত হোসেন নিশাদ
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী । তিনি বলেন,
প্রতি বছরের থেকে এবারের অগ্নিঝরা মার্চ আমাদের কাছে ভিন্ন রূপের। এবারের স্বাধীনতা দিবস আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মহাক্ষণ। আমরা সত্যিই গর্বিত এমন এক মহাক্ষণের সাক্ষী হতে পেরে। আমরা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সেই মহাক্ষণ দেখতে পারিনি। কিন্তু আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মহাক্ষণ দেখতে পেরেছি।আমরা আজ গর্বিত কারণ স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ পৌছেছে।
বর্তমানে সারা দেশে শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ।যা আমাদের জন্য অত্যান্ত গর্বের। কিন্তু দু:খের বিষয়, শিক্ষার হার অনুযারী আমাদের দেশে এখনো পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক এখনো বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন।
আমার এই সোনার সফল বাংলাদেশে আজও আমার মা বোনেরা অনিরাপত্তায় জিবন পার করছে। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার অর্থলোভনীয় দুর্নিতির কাছে মাথানত করতে হচ্ছে দেশের কোটি কোটি মানুষকে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমার প্রত্যাশা এইসব অপ্রাপ্তির অবসান ঘটিতে আমাদের এই দেশ সুখি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের উন্নয়নের এমন ধারা অব্যহত থাকবে। আমরা গর্ব করে যেন বলতে পারি আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।
সেই সাথে আসুন আমরা তরুণ প্রজন্মরা শপথ করি, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যুদ্ধ করে এই দেশকে রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছেন আর আজ আমাদের তরুণ প্রজন্মের যুদ্ধ আমরা যেন সেই স্বাধীনতার মর্যাদা ধরে রাখতে পারি। কোন অপশক্তির কাছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্জন যেন বিলীন হয়ে না যায়।
সময় জার্নাল/